আশার আলো নিভে গেছে আমতলীর তরমুজ চাষিদের


বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকাসমূহে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ কৃষক পরিবারে এখন আশার নৈরাশ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপকূলীয় মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় ক্রমশই তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশার উপকূলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছেন তরমুজ চাষে।একই সাথে তরুণ উদ্যোক্তারাও আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন তরমুজ চাষে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, অধিক মুনাফারা আশায় এবছরও কৃষকরা আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে তরমুজ তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।অনেকেই ইতোমধ্যে আগাম তরমুজ চাষে বেশ লাভবানও হয়েছিলেন। কিন্তু এরই মাঝে অকালে বাদলা হয়ে কৃষকের চোখে হতাশার সৃষ্টি করে টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ৫-৬ দিন উপকূলে গড়ে ২০-৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ২/৩দিন শিলা বৃষ্টিও হয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে তরমুজসহ অন্যান্য ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের মো. নজরুল ইসলাম জানান, 'এ বছর আমি ৫ একর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করছি, কিন্তু এই বৃষ্টিতে ক্ষেতে যে হারে পানি আইটকা রইছে, তাতে আসল টাকা নিয়া ক্ষেত দিয়ে ওঠা দায়!'
কুকুয়া ইউনিয়নের আমিনুল মিয়া জানান, 'আমি এ বছর ৮একর জায়গায় তরমুজ দেছেলাম। বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেত পানি জমে রয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে তরমুজ অনেক নস্ট হয়েছে । চাষিরা বলছে, তাদের অনেক তরমুজেই শিলার দাগ লেগে আছে এবং সেখান থেকে পচন ধরছে।
অন্যদিকে জমিতে পানি আটকে থাকায় অনেকের তরমুজের গাছই ভেসে রয়েছে। ফলে তরমুজ গাছের গোড়া পঁচে গাছ সহ ফলটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পশিচমচিলার তরমুজ চাষী শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়া ৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ দিছি। কিন্তু যে বৃষ্টি হইছে, সাথে এই ঋণ শোধ করমু ক্যামনে হেই চিন্তায় এখনো হুশ জ্ঞান নাই। শুধু আমতলী নয় গোট উপকুলে তরমুজ চাষীদের একই দশা। এখন সকল তরমুজ চাষি রাতদিন ব্যস্ত মাঠে সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন নিয়ে। অনেকের জমিতে পানি এমনভাবে আটকে আছে যেগুলো নিষ্কাশন হতে হতে তরমুজ চারা পচে যাবে। অনেকে আবার বৃষ্টি পানি নিষ্কাশন শেষে জমিতে কীটনাশক ও পচনরোধক ওষুধ প্রয়োগ করছেন।
তরমুজ চাষী বাসুদেব জানান, 'এই বৃষ্টি আর ১০-১৫ দিন পরে হলেও তার আগে কয়েক চালান ঢাকায় পাঠানো যেত। কিন্তু বৃষ্টি না থামলে আমরা ভোগান্তির শিকার হবো।'
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম জানান, আমতলীতে এ বছর ৪ হাজার ৮ শ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। 'তরমুজ চাষীদের জন্য আমাদের দুয়ার সব সময় খোলা। ইতোমধ্যেই কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আমাদের কৃষি অফিসের লোকজনও তরমুজ ক্ষেতে ছুটছেন। ভারী বর্ষায় তরমুজ পচনরোধে কৃষকদের করণীয় বিষয় ও এ সময়ে ক্ষেতে কি কি ওষুধ দেওয়া যায় সেটা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে কৃষকরা বড়রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।'
আমতলীর সাংবাদিক দেওয়ান মো. কবির বলেন,পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবছরই প্রথম তরমুজ চলে যাবে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উপকূলের অর্থনীতি হবে সম্মৃদ্ধ। কিন্তু জমি থেকে তরমুজ ওঠার আগে এমন লাগাতার বর্ষণে হা-হুতাশ আমতলীর তরমুজ চাষী ও ব্যবসায়ীদের।
উপকূলীয় চাষীরা তরমুজকে ঘিরে যে স্বপ্ন সাজিয়েছেন দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার। সামনের একমাস ভারী বর্ষণ না হলে পদ্মা সেতুর বদৌলতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২.৩% বাড়াতে একটা বড় রকমের অবদান রাখবে উপকূলের তরমুজ।
এইচকেআর
