আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে পেলেন না সাদিক আবদুল্লাহ ও শাম্মী আহমেদ

বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগ। তার প্রার্থিতা ফেরত দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর আর নির্বাচনের সুযোগ থাকলো না।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে এ আদেশ দেন। আদালতে আজ সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। অপরপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি শেষে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
তার করা রিটের শুনানি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর মনোয়নপত্র বৈধতা পায়। পরদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন জাহিদ ফারুক। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এর ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর নির্বাচন আটকে যায়। পরে সাদিক আব্দুল্লাহ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন।
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে। মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে তার আইনজীবী ফের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করেছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত শাম্মী আহমেদের আবেদনে কোনো সাড়া দেননি। ওইদিনও প্রার্থিতা ফিরে পেতে ফের আবেদন করেন তিনি।
এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আজ দিন নির্ধারণ করেন আদালত। আদালতে শাম্মীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ।
এর আগে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন শাম্মী আহমেদ। আবেদনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চান তিনি। ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টের পর চেম্বার আদালতেও প্রার্থিতা বাতিল হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের।
ওইদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করেন তিনি। তবে শুনানি শেষে তার আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ফলে তার প্রার্থিতা বাতিলই রাখেন আদালত।
এ আদেশের ফলে দুই কূলই হারান শাম্মী আহমেদ। প্রার্থিতা বাতিলের পাশাপাশি তার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বও বাতিল হতে যাচ্ছে। তার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক আবদেন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
১৮ ডিসেম্বর বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের রিট খারিজ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওইদিনও আদালতে শাম্মীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল হয় বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদের। আর একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের প্রার্থিতা বহাল থাকে। আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এমন রায় দেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন (ইসি)। পরে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করেন শাম্মী আহমেদ।
শাম্মী আহমেদ এবং একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন ইসিতে। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজের।
নির্বাচন কমিশন বর্ণিত আপিলকারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় শাম্মী আহমেদের অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছিলেন শাম্মী আহমেদ।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।
এমএন