ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • নির্বাচনে এমপি প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে নীতিমালা জারি চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’, গ্রেফতার হাজারের বেশি আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চাই, রাজনৈতিক বাধা আমাকে থামাতে পারবে না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পাশে দাঁড়িয়েই তার পদত্যাগ চাইলেন সাদিক কায়েম সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে হাদিকে বাড্ডায় ফের যাত্রীবাহী বাসে আগুন হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের সই করা বিপুল সংখ্যক চেকসহ আটক ৩ পরিবারের সিদ্ধান্তে হাদিকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে হাদির ওপর হামলায় সন্দেহভাজন দুজনের পাসপোর্ট ব্লক, আটক ৩ ভোটের মাঠে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা ইসির, কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ
  • নৌকা রেখে ট্রাকে উঠলো মহানগর আওয়ামী লীগ

    সমালোচনার মুখে সাদিক আবদুল্লাহ

    সমালোচনার মুখে সাদিক আবদুল্লাহ
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন


    প্রার্থীতা বাতিলের পর সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধিন মহানগর আওয়ামী লীগ উঠবে ‘ট্রাকে’। এমন গুঞ্জন ছিল বরিশালজুড়ে। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। বরিশাল সদর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের ট্রাকেই উঠলেন সাদিক অনুসারীরা।


    গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর ব্রজমোহন (বিএম) স্কুল মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিপনের নির্বাচনী জনসভায় প্রকাশ্যেই ‘ট্রাক’ প্রতীকে সমর্থন জানান মহানগর এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাদিক অনুসারীরা।


    এর পর থেকেই সাদিক অনুসারীদের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আওয়ামী লীগের নৌকার বিপক্ষে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সাদিক আবদুল্লাহর ‘এ সিদ্ধান্ত কী ঠিক হলো’ এ নিয়ে প্রশ্ন এখন সবার মুখে। তার ওপর প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের বক্তব্য ক্ষুব্ধ করে মুক্তিযোদ্ধাদের। 
    তবে একেএম জাহাঙ্গীর ও সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধিন মহানগর আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্তে বিচলিত নন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম অনুসারীরা। তাঁরা বলছেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত নৌকার বিজয় আটকাতে পারবে না। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে, তারা নৌকার বিপক্ষে যাবে না।
    এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নগরীর ব্রজমোহন স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের নির্বাচনী জনসভা। ওই জনসভায় অংশ নেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীরা।


    বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ- বীর বিক্রম, আরিফিন মোল্লা, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোয়াজ্জেন হোসেন চুন্নু, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ শাহিন, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা হনুফা, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকউল্লাহ মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজনসহ সাদিক অনুসারীর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


    তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল সহকারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেন। তাদের সবার মুখেই ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের ‘ট্রাক’ প্রতীকের সেøাগান। সভায় বক্তৃতাকালে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনকে নির্বাচিত করার জন্য শপথগ্রহণ করান মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ- বীর বিক্রম।


    মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে মাহাবুব উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সালাউদ্দিন রিপনকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে হবে। সালাউদ্দিন রিপন নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে। কেউ ভয়ভীতি দেখালে তাকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।


    এদিকে, বক্তৃতাকালে সাদিক অনুসারীরা দাবি করেন, সদর আসনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও তিনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ডাকেননি। এমনকি কারোর সাথে যোগাযোগও করেননি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত ট্রাক প্রতীকে সমর্থন দিয়েছেন।
    সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন আধুনিক বরিশাল গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘ট্রাক’ প্রতীকে ভোট চান। এসময় তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাকালিন জাহিদ ফারুক শামীম স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। ওই সময় তিনি পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে থেকে তাদের সহযোগিতা করেছে। সালাউদ্দিন রিপনের এমন বক্তব্য শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, বরং মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।


    এদিকে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ মূহুর্তে এসে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র হয়েও আওয়ামী লীগের নৌকার বিরুদ্ধে সাদিক আবদুল্লাহর প্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে সমালোচনা করেছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাঁরা নাম প্রকাশ করে বক্তব্যে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও সাদিক আবদুল্লাহর এমন সিদ্ধান্ত মোটেই ঠিক হয়নি বলে দাবি তাদের।
    মহানগর আওয়ামী লীগের পুরানো নেতারা বলেন, ‘বরিশাল আওয়ামী লীগে সালাউদ্দিন রিপনের কোন অবদান নেই। দলের কোন কর্মসূচিতেই তাকে দেখা যায়নি কখনো। দলের কোন নেতাকর্মীর বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াননি। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ সেই রিপনকে মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থন করবে সেটা দুঃখজনক। বিষয়টি যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী তারা ভালোভাবে মেনে নিবে বলে মনে হচ্ছে না।


    অপরদিকে, দলীয় ফোরামেই নয়, সাদিক আবদুল্লার এমন সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। তালহা জুবায়ের নামের একজন লিখেছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নৌকার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বরিশালবাসী তাদের ক্ষমতা করবে না। এর জবাব ৭ তারিখ ব্যালটের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
    এনএম আদিব নামের একজন লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা এভাবে বলে যাওয়ার পরও যারা নৌকা ডোবাতে চায় তারা কিসের আওয়ামী লীগ। রাফিন মুন্না লিখেছেন, জাতীয় বেঈমানরা চিন্তিত। এছাড়াও আরও অনেকেই সমালোচনা করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে। অবশ্য কেউ কেউ মহানগর আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তকে নৌকার জন্য চ্যালেঞ্চ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।


    তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীর মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনেও মহানগর আওয়ামী লীগ বিরোধীতা করেছিল। তখনও নৌকার বিজয় আটকে পারেনি। তাই এ নিয়ে আমরা মোটেই বিচলিত নই। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বরিশালবাসী সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তি জাহিদ ফারুক শামীমকেই ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করবে।


    আফজালুল করিম আরও বলেন, ‘বরিশালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সদর আসনের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি সবাইকে নৌকায় ভোট দিতে বলেছেন। জনসভার মাঠে সবাই হাত উঁচিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়েছে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে। সুতরাং যারা আওয়ামী লীগ করে, যারা উন্নয়নে বিশ্বাসী তারা কখনোই নৌকার বিপক্ষে যাবে।


    এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আফজালুল করিম বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনের সময় নৌকার বিজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ানো মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আগেই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হোক।


    এমএন
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ