ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

মুলাদীতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ১৫ হাজার গ্রামবাসীর ছেলে-মেয়ে 

মুলাদীতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায়  ১৫ হাজার গ্রামবাসীর ছেলে-মেয়ে 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৫ হাজার গ্রামবাসীর কোমলমতী ছেলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য ২০১০ সালে সৈয়দা শাহাজাদী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থানান্তরিত হয়। 

ঐ এলাকার অধিকাংশ জনগণই কৃষির উপর নির্ভরশীল। নুন আনতে পানতা ফুরায় অধিকাংশ পরিবারের। জয়ন্তী, ছৈলা ও আড়ীয়াল খাঁ নদী দ্বারা বেষ্টিত কৃষ্ণপুরবাসী কষ্ঠসাধ্য করে ছেলে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো দিতে চাচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। সাথে সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা বাড়ির থেকেই লেখাপড়া করার সুযোগ পায়।  

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম ও তার স্বামী দুলাল কাজী তাদের নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিদ্যালয়টি জয়ন্তী নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে যে নদী ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছিল সেই নদীর পারেই বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সে বিদ্যালয়টি নদীর পার থেকে মাত্র ১৮ফিট দূরত্ব।

কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীরা ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে উপজেলা চেয়ারাম্যান আলহাজ্বতারিকুল খান মিঠু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম ও থানা অফিসার ইনচার্জ তুষার কান্তি মন্ডলের কাছে অভিযোগ জানালে তারা কৃষ্ণপুর বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে দেখেন বিদ্যালয়টিতে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে।  

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর সৈয়দের গাও গ্রামে তাৎক্ষণিকভাবে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে সকল শিক্ষার্থী ভূঁয়া পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে গাছুয়া ইউনিয়নের উত্তর গাছুয়া এলাকায় সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যায়। 

১৯৯০ সালের পর থেকে বিদ্যালয়টি সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় ও দূর্ণীতির কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এসব কারণে ১৯৯৬ সালে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনভাতা সরকারী অংশের প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে নদী ভাঙ্গনের কারণ দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়।

এলাকার সাবেক মেম্বার নুরুল হক বেপারী ও মোতালেব খন্দকার বলেন, বিদ্যালয়টির কাছাকাছি সৈয়দেরগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামাবাদ নেছারিয়া আলিম মাদরাসা থাকায় নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রায় অচল হয়ে পরে। 

ফলে দীর্ঘ দিনেও বিদ্যালয়টি নিম্নমাধ্যমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হতে পারেনি। নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হলে ২০১০ সালে সৈয়দা শাহাজাদী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ওই এলাকায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

কৃষ্ণপুর গ্রামের বাকু হাওলাদার, মিলন বেপারী ও খোকন বেপারী জানান, সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সৈয়দেরগাও এলাকায় থাকাকালীন প্রায় শিক্ষার্থী শূূণ্য হয়ে পরে। 

শিক্ষার্থী না থাকায় স্কুলটি বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছিলো। ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে নদী ভাঙনের সময় বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুরে স্থানান্তর করা হয়। নদী বেষ্টিত এলাকায় অন্যকোনো বিদ্যালয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়। এখন বিদ্যালয়টি অনেক ভালোভাবে চলছে। বর্তমানে প্রায় ২০০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। 

বর্তমান ইউপি সদস্য রাশেদ মাতুব্বার বলেন, বিদ্যালয়টি নিম্নমাধ্যমিক হলেও শিক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে। পার্শ্ববর্তী একটি বিদ্যালয় থেকে ৯ম শ্রেণির নিবন্ধন করে এসএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। 
ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের নামে ৫২ শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে। 

এলাকায় বিদ্যালয় রক্ষার্থে প্রয়োজনে আরও জমি দেওয়া হবে। কিন্তু একটি মহল বিদ্যালয়টি ধ্বংসের লক্ষ্যে সড়িয়ে আগের জায়গায় নিতে চাচ্ছে। এতে বিদ্যালয়টি পুনঃরায় শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে পরবে এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের ছেলে মেয়েদের নদী পার হয়ে বিদ্যালয় যেতে হবে। বর্ষার সময় কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়াপাড় হতে হবে। অনেক অভিভাবকই এ ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে পাঠাতে রাজি হবে না। 

জানা গেছে, কৃষ্ণপুুর, চর আবুপুর, ডুমুরীতলা ও উত্তর গাছুয়া এ চারটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য একমাত্র সৈয়দা শাহজাদী বেগম মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়টি। 

চারটি গ্রাম চারিদিক দিয়ে নদী দ্বারা বেষ্টিত। বিদ্যালয় হতে নিকটবর্তী বিদ্যালয়টি ৪ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। বিদ্যালয়টি যদি কৃষ্ণপুর থেকে সৈয়দের গাঁও-এ স্থানান্তরিত করা হয় তা হলে শিক্ষার্থীদের ৪ কিলোমিটার পথ হেটে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে যেতে হবে ও শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্ঠসাধ্য হবে এবং অকালে ঝড়ে পড়বে ছেলে-মেয়ে শিক্ষার আলো থেকে।

জানা যায়, সরকারী বিধি মোতাবেক এক বিদ্যালয় থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বিদ্যালয়টি সৈয়দের গাঁও গ্রামে যেখানে স্থানান্তরের চেষ্টা চালানো হচ্ছে সেই স্থান হতে মাত্র ০.২৫ (শুন্য দশমিক পঁচিশ) কিলোমিটার বা ৫৬০ হাত দূরত্বে ঐতিহ্যবাহী সৈয়দের গাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। 

নদী ভাঙ্গনের কারণ দেখিয়ে যে বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছিল সেই নদীর পারেই আগের স্থানেই বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নদীর পার থেকে বিদ্যালয়টি দূরত্ব হবে মাত্র ১৮ ফিট।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সামসুল হক চৌধুরীর উত্তরসুরি নাসরিন চৌধুরী কৃষ্ণপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি ঐ গ্রামেই স্থায়ী করণের জন্য দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামী দুলাল কাজী নিজেরদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য স্কুল স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র, বিদ্যালয়ের ফাণ্ডের টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় ৭জন শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে ৫জনের বেতন ভাতা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বন্ধ করে দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের জমি দাতা আ. খালেক রাড়ী জানান, কৃষ্ণপুর প্রত্যন্ত ও অবহেলিত জনপদ। এখানে বিদ্যালয়টির অনেক প্রয়োজন। 

যদিও বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ভাবে এখানে আনা হয়েছিলো। কিন্তু এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেড়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঞ্চিত জনপদে একটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

এছাড়া এই এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার কিংবা বড় ভবন নেই। সেই হিসেবে সংসদ সদস্য বিদ্যালয়ের নামে ভবন বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু সেটা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পায়তারা চলছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম জানান, নদী ভাঙনের ফলে বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ভাবে কৃষ্ণপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় চুক্তি ছিলো, নদী ভাঙন বন্ধ হলে বিদ্যালয়টি পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণের জন্য নির্দেশনা (ডিও লেটার) দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন