নগরীর খাল খননে প্রতিবন্ধকতা ঝুঁকিতে রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি-ঘর

নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ সাতটি খালের খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি স্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে।
তবে খাল খনন কাজে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে খাল পাড়ের অসংখ্য বাড়ি-ঘর এবং রাস্তা। খননের কারণে খাল পাড়ের রাস্তা এবং বাড়ি-ঘর ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী খাল খনন না করেই কাজ শেষ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান
ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খনন করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘নগরীর অভ্যন্তরীণ খালগুলো খননে প্রকল্প গ্রহণ করছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। তাই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই খাল খননের প্রাথমিক স্তরের কাজ করছেন তারা।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ‘আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই নগরীকে জ্বলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি খাল খননের উদ্যোগ নেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম। তার একান্ত প্রচেষ্টায় ২০২২ সালে ১৭ কিলোমিটার খাল খননের জন্য ৬ কোটি ৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
কিন্তু তৎকালিন সময় বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলে ২০২২ সালের প্রথম দফায় দরপত্র আহŸান করা হলেও পরে তা বাতিল করতে হয়। এরপর বর্তমান সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের আগে পুনরায় খাল খননে দরপত্র আহŸান করা হয়। বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খনন কাজ বাস্তবায়ন করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর চাঁদমারী এলাকায় শোভা রাণীর খালের খনন কাজ প্রায় শেষ। সাগরদী খাল এবং চৌমাথা খাল খননের কাজ চলামান রয়েছে। খাল দুটির বিভিন্ন অংশে খনন হলেও আবার বিভিন্ন অংশে খনন কাজ করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এর কারণ হিসেবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি খালের পাশেই রাস্তা এবং বড়-ছোট বাড়িঘর রয়েছে। খালগুলো খনন শুরুর পর পরই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল ধরেছে। বসত বাড়ির নিচ থেকে মাটি ধসে খালে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় খাল খনন কাজ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণের সময় পাশে প্যালাইটিংয় করা হয়নি। আবার খালপাড় ঘেঁষে যেসব বাড়িঘর করা হয়েছে সেগুলো নির্মাণে মার্টার পরিকল্পনা ছিলো না। খালপাড়ে জায়গা না রেখেই বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে এখন খাল খনন করতে গেলেই বাড়ির নিচ থেকে এবং রাস্তা খালের মধ্যে ধ্বসে যাচ্ছে। তাছাড়া খনন করা মাটি রাস্তার পাশেই স্তুপ করে রাখছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ কারণেও বিভিন্ন স্থান হতে রাস্তা ধ্বসে যাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
নগরীর নবগ্রাম রোড শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ঝালকাঠি হিসাব বিভাগের সাবেক অডিটর গাজী ওমর ফারুক বলেন, ‘খাল খনন দীর্ঘ বছরের প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন পরে হলেও খনন কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে ধন্যবাদ জানাই। তবে খালের রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। এটা না করা গেলে এই খনন কাজ বৃথা যাবে।
নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা সুলতান মৃধা বলেন, ‘খাল খনন হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু খননের পূর্বে রাস্তা এবং বাড়িঘরের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনাকরা উচিৎ ছিল। তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী খনন করা যেতো। এখন যেভাবে খনন কাজ করা হচ্ছে তাতে কতটুকু লাভ হবে তা নিয়েও এখন ভাববে হবে।
খাল খননে প্রতিবন্ধকতার কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘খালপাড়ে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। তাই এখন খনন করতে গেলেই তীরে মাটি খালের মধ্যে নেমে আসছে। এতে পাশে থাকা বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মূলতঃ সিটি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কাজ করার সুযোগ নেই। তার পরও আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রæতির কারণে সাতটি খাল খননে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছি। সে দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী খনন করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘খননের পূর্বে প্যালাসাইটিং করা জরুরি ছিল। কিন্তু খাল খননে যা বরাদ্দ পেয়েছি তা দিয়ে প্যালাসাইটিং বা গাইডওয়াল করা সম্ভব নয়। এটি করতে গেলে খননের জন্য যা বরাদ্দ পেয়েছি তাঁর থেকে বহুগুণ টাকার প্রয়োজন। যা চাইলেও আমরা বরাদ্দ পাবো না। তাই যেখানে ১০ ফুট খননের প্রয়োজন স্থাপনা রক্ষায় সেখানে সর্বোচ্চ ৫-৬ ফটু বা তারও কম খনন করতে হচ্ছে। আমারা প্রয়োজন অনুযায়ী খনন করতে প্রস্তুত। কিন্তু স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতি হলে সে দায় কে নিয়ে?
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলতঃ খানন খনন, সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ করবে সিটি করপোরেশন। এজন্য তাঁরা একটি সংশোধীত প্রকল্প তৈরি করছেন। এজন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা এবং পরামর্শও গ্রহণ করেছে। খাল খননের ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে আশাবাদী নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ।
এমএন