ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ

বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ। গড়পড়তা একজন বাংলাদেশি পুরো বছরে মাত্র ৬২ ঘণ্টা বই পড়েন, সংখ্যার দিক থেকে এর পরিমাণ তিনটিরও কম। এর ফলে বই পড়ার অভ্যাস তথা পাঠাভ্যাস র‌্যাংকিংয়ে একেবারে তলানিতে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের পাঠাভ্যাস সংক্রান্ত এক জরিপে দেখা গেছে, ১০২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ৯৭তম স্থানে।

জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বইপড়ুয়া দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নাগরিকরা বছরে গড়ে ৩৫৭ ঘণ্টা বই পড়েন, অর্থাৎ সপ্তাহে প্রায় সাত ঘণ্টা। খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ভারত (৩৫২ ঘণ্টা) ও যুক্তরাজ্য (৩৪৩ ঘণ্টা)। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা) এবং ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা)।

চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান মাঝামাঝি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতই একমাত্র পাঠাভ্যাসে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ (৬২ ঘণ্টা), পাকিস্তান (৬০ ঘণ্টা) ও আফগানিস্তান (৫৮ ঘণ্টা) বিশ্বের সবচেয়ে কম বইপড়া দেশের তালিকায় জায়গা পেয়েছে।

ফোনের টানে বই ত্যাগ
এক সময়ের সাহিত্যচর্চায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশে আজ বই পড়ার অভ্যাস দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশক ও শিক্ষকদের মতে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ার আগ্রহ প্রায় হারিয়েই গেছে।

খুলনার এক লাইব্রেরিয়ান বলেন, শিশুরা টিকটক আর ফেসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেয়, কিন্তু বইয়ের সঙ্গে পাঁচ মিনিটও কাটায় না। এমনকি শিক্ষিত পরিবারেও এখন বই রাখা হয় না।

একুশে বইমেলা ও অনলাইন বুকস্টোরগুলো বইয়ের বাজার টিকিয়ে রাখলেও, তথ্য বলছে, পাঠকদের পড়ার অভ্যাস অত্যন্ত অনিয়মিত। বড় শহরের বাইরে গ্রন্থাগার প্রায় নেই বললেই চলে, গ্রামীণ এলাকার বহু শিক্ষার্থী কখনো গল্পের বই হাতে পায় না।

জরিপটি বিশ্বজুড়ে এক স্পষ্ট বিভাজন দেখিয়ে দিচ্ছে, যেখানে একদল মানুষ এখনো বইকে জীবনের অংশ মনে করে, আরেকদল বই ছেড়ে ছোট ভিডিও ও সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে।

যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মানুষ প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা বই পড়ে, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ পড়ে গড়ে পাঁচ মিনিটেরও কম।

ঢাকার এক প্রকাশক বলেন, বই পড়া কমে যাওয়া মানে শুধু পাঠাভ্যাস হারানো নয়, এর সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কল্পনা, সহমর্মিতা আর জ্ঞান। এটি এক ধরনের মানসিক দারিদ্র্য।

গ্লোবাল রিডিং র‍্যাংকিং ২০২৪
বিশ্বজুড়ে পাঠাভ্যাসের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছে গ্লোবাল রিডিং র‍্যাংকিং ২০২৪। এতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গড় বার্ষিক বই পড়ার সময় বিবেচনা করা হয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, বই পড়ায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশ হলো- যুক্তরাষ্ট্র (৩৫৭ ঘণ্টা), ভারত (৩৫২ ঘণ্টা), যুক্তরাজ্য (৩৪৩ ঘণ্টা), ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা), ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা), কানাডা (২৩২ ঘণ্টা), রাশিয়া (২২৩ ঘণ্টা), অস্ট্রেলিয়া (২১৭ ঘণ্টা), স্পেন (১৮৭ ঘণ্টা) ও নেদারল্যান্ডস (১৮২ ঘণ্টা)।

মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড ও তাইওয়ান (১৫৭ ঘণ্টা), সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম ও হংকং (১৫৫ ঘণ্টা)। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনের মানুষেরা (মূল ভূখণ্ড) গড়ে ১৫৪ ঘণ্টা বই পড়ে।

জাপানের অবস্থান তুলনামূলক নিচে, তারা বছরে গড়ে মাত্র ১৩৫ ঘণ্টা বই পড়ে। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের নাগরিকরা বছরে ১৩০ থেকে ১২৫ ঘণ্টা সময় দেন বই পড়ায়।

ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় গড় বই পড়ার সময় ১২৩–১২২ ঘণ্টা। নিউজিল্যান্ড ১১৯ ঘণ্টা; গ্রিস, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেন ১১৭ ঘণ্টা এবং স্লোভাকিয়া ১১৬ ঘণ্টা বই পড়ে।

তালিকার নিচের দিকে দেখা যায়, কেনিয়া ১০৮ ঘণ্টা, আর্জেন্টিনা ১০৩ ঘণ্টা এবং ভেনেজুয়েলার মানুষেরা ১০৪ ঘণ্টা বই পড়ে।

আর সবচেয়ে নিচের অংশে রয়েছে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। মরক্কো (৬৭ ঘণ্টা), আলজেরিয়া ও কাজাখস্তান (৬৫ ঘণ্টা), ইরাক (৬৪ ঘণ্টা) এবং বাংলাদেশ (৬২ ঘণ্টা) বই পড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ব্রুনেই সারা বছরে বই পড়ে গড়ে ৬০ ঘণ্টা।

তালিকার একেবারে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান। সেখানে একজন নাগরিক বছরে গড়ে মাত্র ৫৮ ঘণ্টা বই পড়েন।


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন