কুয়াকাটায় ট্যুরিজম পার্ক চালুর আগেই ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে


উদ্বোধনের এক বছর তিন মাস পরও কুয়াকাটায় চালু হয়নি ‘ট্যুরিজম পার্ক’। এরই মধ্যে সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গন ঝুঁকির শঙ্কায় পড়েছে। মুজিবশতবর্ষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ এই পার্কটির আনুষ্ঠিানিক উদ্বোধন করা হয়।
বর্তমানে পার্কটি সাগরের ভাঙ্গন ঝুঁকির কবলে পড়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ ও টিউব দিয়ে চেষ্টা করছেন সৈকতসহ সংলগ্ন বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায়। কিন্তু ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছেই। ঘুর্ণিঝড় ইয়াস ও গত চার দিনের টানা বর্ষন আর বৈরী আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে জিও টিউব পর্যন্ত পানির নিচে চলে গেছে। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হয়ে গেছে সৈকতের প্রায় ১০-১৫ ফুট। ভাঙ্গনের শঙ্কায় পড়েছে ট্যুরিজম পার্কটি।
কুয়াকাটা সৈকতের শুন্যপয়েন্টের পূর্বদিকে নারিকেল বাগানের মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রস্থ এই পার্কটি নির্মান করা হয়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে এক কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দে সাগরপারে দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটি নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ পার্কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
পার্কটিতে পর্যটকের জন্য বহুমুখি সুবিধা চালুর কথা রয়েছে। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা পার্কটিতে থাকা লকার ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যেখানে জুতো-স্যান্ডেল, মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামে মাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময় এ লকার ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। অন্তত দুই শ’ লকার থাকছে। পার্কটি রয়েছে বাউন্ডারি ঘেরা। টিনশেড আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ একতলা আলাদা বিশ্রামাগার থাকার কথা রয়েছে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকবে।
বসেই উত্তাল সমুদ্রে দৃষ্টি রাখতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোছল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকবে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পাল্টানোর মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত ওয়াশরুম, ৫০ সিটের কফি হাউস থাকার কথা ছিল। প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকার কথা ছিল ক্যাফে কর্ণার।
এমনকি ফি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের ব্যবস্থা থাকবে এ পার্কটিতে। এ পার্কে বিশাল আকৃতির স্থায়ী ছাতা থাকবে। যার নিচে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার থাকছে। থাকছে বেঞ্চি। পার্কটি সবসময় প্রশাসনিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হবে। পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষ কারণে পর্যটকরা রাত্রি যাপনেরও সুযোগ পাবেন। এমনকি পার্ক সংলগ্ন সীবিচে বোল্ডার দিয়ে সাগরের ঢেউয়ে বেলাভূমি ক্ষয়রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জিও টিউব দেয়া হয়েছে উত্তাল ঢেউয়ে যেন বীচের বেলাভূমের ক্ষয় বন্ধে।
বর্তমানে এ পার্কটি পুর্ণাঙ্গভাবে চালু করলে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীর বিনোদন কেন্দ্রীক নতুনমাত্রা পাবেন। এছাড়া সাগরে গোসলের আগে কিংবা পরে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হতো তা লাঘব হবে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করায় পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পুরন হলো। এখন এটি চালু করা প্রয়োজন। কিন্তু বছর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চালু না হওয়ায় পর্যটকরা হতাশা ব্যক্ত করেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য-সচিব আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এটি চালু করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হালিম সালেহী জানান, সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটা থেকে সৈকত রক্ষায় এবং সৈকত ঘেঁষা মসজিদ-মন্দীর, ট্যুরিজম পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় পরপর দুই বছর ‘পূর্ব সতর্কতামূলক কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ’ করা হয়েছে। জিও টিউব, জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছে। যার সুফল পাওয়া গেছে।
তবে সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পরপর তিন দিন জলোচ্ছ্বাস হানা দেয়। এছাড়া গত কয়েকদিনের অতিবর্ষণ অস্বাভাবিক জোয়ারেও সৈকতের ক্ষতি করেছে। এ কয়দিনও জোয়ারে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ঢেউ বয়ে গেছে। ফলে কিছুটা ক্ষতির কবলে পড়েছে গোটা সৈকত এরিয়া।
এইচকেআর
