তালতলীতে ২ দিন ধরে চেয়ারম্যানের বাড়িতে তরুণীর অনশন
বরগুনার তালতলীতে স্ত্রীর অধিকার আদায়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আমরণ অনশনে বসেছেন ভুক্তভোগী এক তরুণী। ওই তরুণী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীর ছোট ভাই জলিল ফরাজীর পুত্র রাকিব ফরাজির স্ত্রী। স্ত্রী হিসেবে মেনে না নিলে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে শনিবার টানা ২ দিন পর্যন্ত নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীর বাড়িতে স্ত্রীর অধিকার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ার কারণে এ আমরণ অনশন শুরু করেছেন ওই তরুণী। চেয়ারম্যানের বাড়িতে ওঠার পর থেকেই চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী তার পরিবার- পরিজন নিয়ে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এরপর থেকে তিনি সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরণ অনশনরত তরুণী বলেন, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীর ভাই জলিল ফরাজীর পুত্র রাকিবের সাথে তার এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
বিয়ের আশ্বাসে রাকিব তার সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও করেন বলে তিনি জানায়। এরপর বারবার আশ্বাস দিয়েও বিয়ে না করে তার সঙ্গে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য পরিবারের সদস্যদের দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। পরে ভুক্তভোগী ওই নারী তালতলী থানায় ধর্ষণ মামলার প্রস্তুতি নিতে গেলে চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীর মধ্যস্ততায় বিয়েতে রাজি হন রাকিব। এরপর গত ১৮ জুলাই (সোমবার) তালতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ারা হামিদ, থানার একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ৩ লক্ষ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে কিছুদিন ওই তরুণী শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করে সংসার করার পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কোন প্রকার চিকিৎসা না করিয়ে স্বামী রাকিবের বাবা- মা তার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়।
বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে স্বামী রাকিব তার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিছুদিন পরে সুস্থ হয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেলেও তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেননি স্বামী রাকিবের বাবা- মা। তারপর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি চেয়ারম্যানের বাড়িতে আমরণ অনশনে বসেছেন। তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে না নিলে তিনি সেখানেই আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী তরুণী আরো বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে চাই। স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে চাই। আমার বিয়ের সময় চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী উপস্থিত ছিলেন কিন্তু এখন তিনিও এ বিষয়ে কোনো প্রকার সহযোগিতা করছেন না।’
তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে করে এখন তারা অস্বীকার করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি চাই তারা আমার মেয়েকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নিক।’ এ বিষয়ে জানতে স্বামী রাকিব ও তার পিতা জলিল ফরাজীর সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাদের দু’জনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করে ‘আমি ব্যস্ত আছি এবং এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। ছেলের বাবার সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করেন বলে ফোনের লাইনটি কেটে দিয়ে মুঠোফোনটি বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে তালতলী থানার পরিদর্শক (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামান মিয়া মুঠোফোনে বলেন, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অনশনরত তরুণীর দাবি তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া এবং তার স্বামীকে তার কাছে ফিরিয়ে না দেওয়া হলে তিনি এখান থেকে কোথাও যাবেন না।
এমবি