পৌরসভা ভবনে তালা দিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা


কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌরসভা ভবনে তালা লাগিয়ে টানা এক সপ্তাহের জন্য আনন্দ ভ্রমণে বেরিয়েছেন। এর ফলে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে গোটা পৌর শহর। বিনা নোটিশে পৌরসভা তালাবদ্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকরা। এ ঘটনায় পর্যটন শহরটিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর থেকে মেয়র-কাউন্সিলররা ঘুরছেন সমতল থেকে পাহাড়-সমুদ্রে। এর ছবি আপলোড করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী- কেউ নেই কর্মস্থলে। অভিযোগ রয়েছে, মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের অনুসারী ঠিকাদাররা সফরের অর্থায়ন করেছে। এ আনন্দ ভ্রমণ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পৌরবাসী।
পৌরসভার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি কিংবা ছুটি না নিয়ে পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েই কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, হিমছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান তারা। এ সফরে মেয়রের সঙ্গে তার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, দুই নাতি, মেয়রের মালিকানাধীন হোটেলের ম্যানেজার, গাড়ির ড্রাইভারসহ পৌর নির্বাচনে অর্থায়ন করা কয়েকজন ঠিকাদার ও তার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও আছেন। অসুস্থতাজনিত কারণে ভ্রমণে যাননি ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলুল হক খান এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের হোসেন।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ নভেম্বর পৌরসভায় গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। মেয়র, কাউন্সিলররা কক্সবাজার ভ্রমণে গেছেন। এতে তিনি তার চার বছর ও চার মাস বয়সী দুই মেয়ের জন্মনিবন্ধন করাতে পারেননি।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরজামাল বলেন, বুধবার পরিচয়পত্র আনতে গিয়ে দেখেন পৌরসভার প্রধান ফটকের বাইরে ও ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। সবাই ভ্রমণে গেছেন।
পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সুপারভাইজার মো. ইউসুফ জানান, কাউন্সিলর সাবের আকন, ফজলুল হক খান ও বড় ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া পৌরসভার সবাই কক্সবাজার গেছেন। তাই অফিস বন্ধ।
পৌরসভার সচিব কাব্যলাল চক্রবর্ত্তী বলেন, পৌর পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কক্সবাজার গেছেন। তার দাবি, গত তিন দিন অফিস নিয়মিত খোলা ছিল। তিনি অফিস করেছেন।
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, মেয়র একদিনের জন্য কোথাও গেলে প্যানেল ১, ২ অথবা ৩-কে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। এভাবে টানা এক সপ্তাহের জন্য পৌর কার্যালয় বন্ধ রেখে বিনোদন ভ্রমণে যাওয়াটা (খারাপ) দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
কলাপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও জগৎবন্ধু মণ্ডল বলেন, এটা তো অসম্ভব। অফিস এভাবে তিন দিন বন্ধ থাকতে পারে না।
পটুয়াখালী জেলার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলররা কার্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে যেতে পারেন না। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
কুয়াকাটা পৌরসভার ঠিকাদার মো. মামুন জানান, তার শরীর ভালো না থাকায় তিনি যাননি। মেয়র তার কাছে টাকা চেয়েছিলেন কিন্তু দেননি। তবে কাউন্সিলর আবুল ফরাজীকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পৌর পরিষদ খোলা আছে। ৪ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। সচিবও আছেন। এ ছাড়া ডিসি বরাবর লিখিত আবেদন করে এবং ফোনে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে তারা ভ্রমণে গেছেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে কাউন্সিলর ফজলুল হককে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। কাউন্সিলর সাবের আকন এ প্রসঙ্গে বলেন, তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন।
এনামুল হক / এইচকেআর
এইচকেআর
