১৫ বছর ধরে খাকদোনে নৌকা বেয়ে সংসার চালাচ্ছে এই নারী


বরগুনার বুক চিরে বয়ে যাওয়া খাকদোন নদীতে নৌকা বেয়ে বৃদ্ধা মা ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন লিলি আক্তার (৩৫) নামে এক নারী। লিলি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া গ্রামের মৃত ফটিক উদ্দিনের মেয়ে। লিলির বয়স যখন ১০ তখন থেকেই বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো শিখে নেন লিলি। তখন থেকেই হয়ে যান মাঝি। পরে ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে লিলির বাবা ফটিক উদ্দিন মারা যান। লিলির ভাই আলাদা থাকায় সংসার চাপ পড়ে লিলির ঘাড়ে।
এরপর থেকে পুরোদস্তুর মাঝি হিসেবে বাবার নৌকা নিয়ে খাকদোনে নেমে পড়েন লিলি। জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়ায় দিনভর ঢলুয়া থেকে ফুলতলায় যাত্রী পারাপার হয় লিলির খেয়া নোকায়। প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেয়া চালায় লিলি। এনে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হয় তার।
ছোটবেলায় চাচাত ভাই জাকির সাথে বিয়ে হয় লিলির। এর ৮ বছর পর জাকির তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। বরগুনা সদরের এর কিছুদিন পর ঢলুয়া গ্রামের নাসিরের সাথে বিয়ে হয় লিলির। এই সংসারে তিন মেয়ের জন্ম হয়। এদিকে থাকার মত ঘর না থাকায় এই খাকদোন নদীর পাড়েই ঝুপড়ি ঘর তুলে মাকে নিয়ে বাস করছেন তিনি। তার স্বামীর অন্যের ট্রলারে মাছ ধরেন। লিলির বর্তমান শশুরবাড়ির কারও সাথে যোগাযোগ নেই। এরমধ্যে বিয়েও হয় লিলির। ধার দেনা করে স্বামীকে বিষখালী নদীতে মাছ ধরার জাল নৌকা কিনে দেয় লিলি। কিন্তু দেনার ভারে সেই জাল নৌকা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পরে লিলির পরিবার।
লিলি আক্তার জানান, বাবার কাছে নৌকা চালানোর হাতেখড়ি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমিই মাঝি হয়ে যাত্রী পারাপার করতে থাকি। সারাদিন নৌকা চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। দিনে ৩০০/৪০০ টাকা পাই। এদিয়ে সংসার চালাবো নাকি অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাবো। দিনে ১০-১১ ঘন্টা নৌকা বাইতে বাইতে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। এই হাতে এখন আর অন্য কোন কাজ করতে পারিনা। লিলি আরও বলেন, নৌকায় যদি একটা ইঞ্জিন লাগানো যেত তাহলে আর এত কষ্ট হত না আমার। সরকারের আমি একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা চাই। আর থাকার জন্য একটা ঘর চাই। এবিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নারীর নৌকা চালানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। আমরা ওই নারী মাঝিকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানাবো।
এইচকেআর
