আমতলীতে চেয়ারম্যান মেম্বারের দ্বন্দ্বে হামলা, যুবদল নেতাসহ আটক ২


বরগুনার আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার চেষ্টাকালে রামদার কোপে আরেক ইউপি সদস্যসহ ২জন আহত হয়েছে।
ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফিরোজ খান তাপসসহ দু’জনকে আটক করেছে নৌবাহিনী।
জানা গেছে, গত জুন মাসের ১৯ তারিখ আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধার নিকট থেকে ইউএনও অফিস গেট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসে আমতলী সদর ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ তাপস খান ফিরোজ তার অনুসারী বাহিনী নিয়ে দোকান ঘেরাও করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে লিখিত ভাবে ১০ জুলাই পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে নেন।
তার দায়িত্ব পালনের নির্ধারিত তারিখ শেষ হলে রোববার সকাল ১০টার সময় ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা তার দায়িত্ব পালনের জন্য খুরিয়ার খেয়াঘাটে অবস্থিত ইউপি কার্যালয়ে যান।
কার্যালয়ে তখন সেবা নেওয়ার জন্য ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১ টার সময় যুবদল নেতা ও ইউপি সদস্য ফিরোজ খান তাপস আকস্মিক ৩০-৪০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে হকিস্টিক ধারালো দা ও লাঠি নিয়ে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে কমপ্লেক্স চত্ত্বরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করে চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে এলোপাথারি হামলা শুরু করেন।
এসময় ইউপি সদস্য সোহেল খান (৪০) এবং জসিম মৃধা (৫০) চেয়ারম্যানকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলে তাদের দুজনকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর জখম করে তাপসের লোকজন।
খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফিরোজ খান তাপস ও রাসেল আকন নামে ২জনকে আটক করে ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
খবর পেয়ে তাপসের স্ত্রী খাদিজা বেগমের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন অনুসারী নিয়ে পুলিশ ও নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আহত ইউপি সদস্য সোহেল খানকে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জসিম মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সেবা নিতে আসা বিউটি নামের এক গৃহবধূ বলেন, বাবা দেহি ব্যামালা লোক দাও লাঠি লইয়া বোমা ফাডাইয়া মাইর ধইর শুরু করে। মোরা এইয়া দেইখ্যা দুরে চইল্যা যাই।
বশির খান নামে আরেক জন বলেন, স্যার পুলিশ নৌবাহিনী না থকলে আইজ চেয়ারম্যানেওে মাইর্যা হালাইতে। ব্যামালা গন্ডগোল অইছে।
আহত ইউপি সদস্য সোহেল খান বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান ও যুবদল নেতা ফিরোজ খান তাপস ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ককটেল ফাটিয়ে এবং রামদা ও হকিস্টিক নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করতে যান।
তাদের রক্ষার জন্য এগিয়ে গেলে আমাকে এবং জসিম মৃধাকে রামদা দিয়ে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন।
প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ খান তাপস তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আওয়ামী স্বেচ্ছসেবকলীগ উপজেলা শাখার সভাপতি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের লোক তাই আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ করে দলীয় ভাবে হেয় করার জন্য এই ঘটনা সাজিয়েছে।
আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা বলেন, ইউনিয়ন যুবদল নেতা ও প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ খান তাপস ও আমি ইউপি কার্যালয়ে গেলে হামলা করে। ভাগ্যক্রমে আমি বেচেঁ যাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে আমতলীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান, আমতলী -তালতলী সার্কেলের এএসপি তরিকুল ইসলাম মাসুদ ও নৌবাহিনীর তালতলী কন্টিজেন্টের কমান্ডার মো. আরাফাত ও আমতলী থানার ওসি তদন্ত মো. আমির হোসেন ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেন।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত ) আমির হোসেন বলেন, নৌবাহিনী সদস্যরা যুবদল নেতা ও ইউপি সদস্য ফিরোজ খান তাপসসহ দুজনকে আটক করেছে। এখনো তাদেরকে থানায় সোপর্দ করেনি। তাদের সিন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইচকেআর
