বাউফলে বিএনপি ও জাতীয়পার্টির সাবেক নেতা ফারুক এখন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী


পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ইব্রাহিম ফারুক আসন্ন বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতিমধ্যে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ডিগবাজ নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি (একাংশ)।
কে এই ফারুক?
স্থানীয় বিএনপি ও জাতীয়পার্টির অনেক নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,১৯৮২ সালের ১০ মার্চ বাউফল ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্রদলের ব্যানারে জিএস নির্বাচিত হন। ওই প্যানেল থেকে তাঁরই আপন বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান ওরফে বাচ্চু ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভোল পাল্টে ফারুক এরশাদের জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি হন। পরবর্তীতে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যান। ১৯৯২ সালে যুবদলের আহ্বায়ক হন। ১৯৯৩ সালে উপজেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
ফারুকের বড় ভাই হাফিজুর রহমান ওরফে বাচ্চু ছিলেন জাগো দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিএনপি করার অভিযোগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাসস থেকে হাফিজুরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
জাতীয়পার্টি ও বিএনপি করার সময় তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ফারুকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে তাঁর আরেক বড় ভাই ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ইব্রাহিম সেলিম ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৯৮২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এরশাদ সরকারের সময় সেলিমকে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। সেই ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে ডিগবাজ ফারুক আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন। অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অথচ শহীদ ইব্রাহিম সেলিমের একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান ইব্রাহিম ওরফে ডরোথির ঠাই হয়নি তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তিতে। ইব্রাহিম ফারুক ও তাঁর ভাই হাফিজুরের বিশাল অট্রালিকা থাকলেও ঘর উঠানোর মত জায়গা রাখা হয়নি ডরোথির জন্য। এ সংক্রান্ত ডরোথির আর্তনাথের ভিডিও অনেকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ :
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মো. জসিম উদ্দিন ফরাজি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ওয়াদুদ মিয়ার ওষুধের দোকানে হামলা চালানো হয়েছিল এই ইব্রাহিম ফারুকের নেতৃত্বে। দোকানের ওষুধ ও আসবাব ভেঙে ফেলা হয়। তখন আমি ওই দোকানে বসে ওয়াদুদ মিয়ার সঙ্গে দলীয় বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। দুঃখ হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনকারী এখন আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা। তাঁরাও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোসারেফ হোসেন খান বলেন,‘ফারুক কোন সালে আওয়ামী লীগে এসেছে তা সঠিক বলতে পারবো না। তবে অনেক বছর হয়েছে। আওয়ামী লীগে আসার পর আর দল পরিবর্তন করেননি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,‘বিএনপি ও জাতীয়পার্টিতে থাকার সময়ও মারামারি ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতেন ফারুক। এখনও সেই কাজ করছেন তিনি। আর তাঁর কারণেই দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। ’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। বিএনপি ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় আমাদের নেতা-কর্মীরা যাঁর হাতে মার খেয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন এবং দলীয় মনোনয়ন চান।’ তিনি আরও বলেন,তাঁর ভাই ইব্রাহিম সেলিম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হওয়ার পরেও ফারুক ছাত্রদলের প্যানেলে জিএস পদে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। যা সবারই জানা।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইব্রাহিম ফারুকের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি।
এইচকেআর
