৫০ বছরের জীবন শেষে নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে খুশি গৃহহীন কৃষক


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ’মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে গৃহহীনদের মধ্যে ঘর বিতরন প্রকল্পের আওতায় তৃতীয়ধাপে চরফ্যাসনে ৩ শ ৪০ ঘরের কাজ চলমান আছে, এরমধ্যে ১ শ ২০ টি পরিবারের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শনিবার রসুলপুর ও নজরুল নগর ইউনিয়ন পরিষদে পৃথক সভায় এ সব সুবিধাভোগীর তালিকা যাচাই- বাছাই সম্পন্ন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান। এসব সভায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবু আবদুল্লাহ খান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সুবিধাভোগী ভূমিহীনরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাগেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনার উদ্দ্যোগে গৃহহীন পরিবারগুলোর মধ্যে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর বিতরণ করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে উপজেলার মোট ৯০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘরদেয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে আরো ১ শ ২০ টি ঘর বরাদ্দ দেয়ার জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে।ইতিমধ্যে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। চলতি মাসের ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ঘরগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহহীন পরিবার গুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান নিশ্চিত করেছেন।
তৃতীয় ধাপে চরফ্যাসন উপজেলায় ১ শ ২০ টি পরিবারের মধ্যে জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৩ টি, রসুলপুর ও নজরুল নগর উইনিয়নের ৪৭ টি হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে ১০ টি চর মানিকা ইউনিয়নের ৬০ টি ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। গতকাল সত্ত্বে জমিনে যাচাই- বাছাই শেষে এসব পরিবারের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। চুড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম দেখে আনন্দে আত্মহারা ৬০ বছরের কৃষক আবুল কালামের মতো ভূমিহীন মানুষগুলো।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নিজের ঘর আর ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা পাচ্ছেন না। ৬০ বছরের কৃষক আবুল কালাম জানান,১০ বছর বয়সে ভূমিহহীন বাবা আবদুস সোবহান মারা যান। তখন লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের কর্তারহাট বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে সরকারি জমিতে ঘর ছিল। শিশুকালে বাবার মৃত্যুর ফলে জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জীবন এবং জীবিকার তাগিদে সরকারী খাসজমিতে পৈত্রিক গৃহ ফেলে চরফ্যাসনের মুজিবনগরে বড়বোন কুলসুমের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। এখানে থেকে কৃষি দিন মজুরী করেন।
সময়ের ব্যবধানে চরফ্যাসনের নজরুল নগর ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ ঢালীর মেয়ে হাজেরাকে বিয়ে করেন। জীবিকার প্রয়োজনে চট্টগ্রাম রিক্সা চালান। স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ওখানে থাকার পর গত একযুগ ধওে শ্বশুড় বাড়ীতে ঘরজামাই আছেন। ঘরজামাই ওেথকে বড় ছেলে এবং বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। টানাপোড়েনের সংসার জীবনে নিজের একখন্ড জমি হবে এবং সেখানে নিজের ঘর হবে তা স্বপ্নে দেখার শক্তি ও নিঃশেষ হয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদেও ঘর দেবেন এমন খবর পেয়ে আবেদন করেন বৃদ্ধ আবুল কালাম। গতকাল শনিবার যাচাই – বাছাই শেষে সুবিধাভোগীদের চুড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধ।
এ সময় সংবাদকর্মীদের জিজ্ঞাসার জবাবে আবুল কালাম ১০ বছর বয়স থেকে গত অর্ধ শত বছরের ভাসমান জীবনের দুঃখ কষ্টের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, জীবনে আর কোন কষ্ট নেই। একখন্ড জমি আরএকটি ঘরের স্বপ্ন ছিল। এ জীবনে তা বাস্তব হবে কখনো ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রীর অনুগ্রহে আজ আমার স্বপ্ন পুরন হয়েছে। আমার সন্তানেরা নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছে। আমার ভাসমান জীবনের অবসান ঘটেছে।
এইচকেআর
