বানারীপাড়ায় কেরামত আলী খান মৃত্যুর ২ বছর পর পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বরিশালের বানারীপাড়ায় মৃত্যুর দুই বছর পর সাবেক উপপুলিশ পরিদর্শক মো. কেরামত আলী খান বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
শুক্রবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত গেজেটের কপিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নাম দেখতে পেয়ে স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকায় বনশ্রী আল-রাজী হাসপাতালে ক্যান্সার রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের জন্য তখন বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে গেজেটে তার নাম না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ৭১-এর রণাঙ্গনের প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই ওই দিন বিকালে বানারীপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তার মরদেহ পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ির আঙিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এ নিয়ে তখন গণমাধ্যমে ‘আফসোস নিয়ে চলে গেলেন কেরামত আলী খান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
শুক্রবার দুপুরে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলী খানের স্ত্রী জাহানারা কেরামত কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, আজ যদি তাঁর স্বামী বেঁচে থাকতেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেখে কতই না খুশি ও আনন্দিত হতেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমৃত্যু তাঁর স্বামী পুলিশের আইজিপি, স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জামুকাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নাম দেখে যাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল ছিলেন। তাঁর স্বামীকে মনে আফসোস নিয়ে চিরতরে চলে যেতে হয়েছে। এ কষ্ট-যন্ত্রণা ও আফসোস গোটা পরিবারকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তারপরেও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
কেরামত আলী খানের জ্যেষ্ঠ মেয়ে কামরুন্নাহার রুবী বলেন, প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বাবা যেতেন। বাসায় ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোস করে বলতেন অনুষ্ঠানে সব মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এ সম্মান থেকে বঞ্চিত।
আজ যদি বাবা শয্যাশায়ী অবস্থায়ও বেঁচে থেকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির খবর শুনতেন, দারুন খুশি হতেন। তার চোখে আনন্দ অশ্রু বয়ে যেত। বাবা নেই। তার স্বীকৃতি আমাদের কাছে যেমন আনন্দের, তেমন আফসোস ও বেদনারও।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক বলেন, কেরামত আলী খান আফসোস নিয়ে চলে গেছেন। তিনি জীবদ্দশায় এ স্বীকৃতি পেলে খুশি হতেন। মৃত্যুর পরে হলেও তাঁর এ প্রাপ্য স্বীকৃতি পরিবার এবং তাঁর জন্য গৌরব ও সম্মানের।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খলিলুর রহমান চোকদার বলেন, একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে যদি স্বাধীনতার পরে ৫৪ বছর অপেক্ষা করতে হয় সেটা খুবই দুঃখজনক। আর সেই স্বীকৃতি যদি তার মৃত্যুর পরে মেলে সেটা আরো বেদনাদায়ক। অবশেষে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।
এইচকেআর
