ঋণের জালে বন্দী পাথরঘাটার জেলেরা


মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে মাছ শিকারে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই
টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু সস্তি ফেরেনি উপকূলীয় জেলেদের জীবনে। ঋণ আর দাদনের বেড়াজালে আটকে আছে তাদের জীবন। ঋণের জালে বন্দী হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে উপকূলের শত শত জেলে। জেলেদের আয়ের জন্য নেই বিকল্প কোনাে পেশা। দুই মাসেরও বেশি সময় বেকার কাটাতে হয়েছে তাদের। অবরোধকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই এই চাল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন বেকার এই সময়ে ধার কর্য করে সংসারের হাল ধরেছেন তারা। এ কারণে চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটছে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বরগুনা জেলার পাথরঘাটার উপজেলার হাজারও জেলের। সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে ঋণের বোঝায় চিন্তার ভাজ কপালে।
পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ ঘাটের জেলে সরোয়ার জানান, এখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ জেলে। বিষখালী নদীতে এবছর মাছ নাই বললেই চলে। ৬৫ দিনের সরকারের অবরোধ আমরা মানি কিন্তু আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমার বাসায় পাঁচজন সদস্য; ২ মেয়ে ১ ছেলে ও স্ত্রী। নদী ছাড়া আমাদের কোনো আয় নাই। নদীই আয়ে উৎস। ধার কর্য করে সংসার চলে। প্রয়োজনে বউয়ের সোনা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। যদি সরকার সাহায্য করে তাহলে আমরা স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারি। অবরোধে কোন ত্রান পাইনি। এর আগেও সরকারি জাল দেওয়া হয়েছে সেখখানে সরকার ৪০ কেজি দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা ২০ কেজি পেয়েছি।
ছোট পাথরঘাটার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুন মিয়া জানান, নদীতে নামতে পারলে টাকা আছে এখন নদীতে নামতে পারিনা তাই কোন ইনকাম হয়না। অবস্থা খুব খারাপ হয়। নদী থেকে আয় করতে পারলে দিন ভালো চলে। নদীতে আয় বন্ধ এদিকে কোন কাজ নাই। এনজিও থেকে লোন নিয়ে আবার মাছ ধরতে নামতে হবে। ১ লাখ টাকা ঋণী। এতটাকা পরিশোধ করতে তো এক বছর সময় লেগে যাবে। সংসার চলে কিভাবে!
আরেক জেলে জহিরুল ইসলাম জানান ৫০ হাজার টাকা ঋণী আছি। নদীতে নামতে হলে আবার ঋণ নিয়ে নামতে হবে। যদি বিনা সুদে সরকার ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো আমরা পাথরঘাটার জেলেরা। একই এলাকার বাসিন্দা জেলে আকবর জানান, প্রতিদিন মাছ ধরে বিক্রি করে সেই আয়ে সংসার চলে। অবরোধে খুব অভাবে সংসার চলছে। অবসর সময় কাটছে। বাইরে কোন কাজ নেই। সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এখন ছেড়া জাল ঠিক করে সময় পার করছি। নতুন জাল কিনে নদীতে নামে হবে।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার জানান, জেলেরা সবাই চাল পাওয়ার কথা। তালিকায় হয়তো পরে আসবে। একবারে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। অনেকের জেলে আইডি কার্ড নেই। প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া বাদ পড়ার কথা নয়। ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জনকে ৪০ কেজি হারে প্রতিমাসে চাল দেওয়া হবে। অবরোধ চলাকালীন জুন মাসে ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন জেলেকে ৮ হাজার ২০৬ মেট্রিকটন চাল দেয়া হয়েছে।চূীচচলেদ
এমবি
