লেখা চুরির প্রতিবাদ করে চাকরিচ্যুত চিকিৎসক!
গবেষণার লেখা চুরির প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাব্বির করিম। তারই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ উত্থাপন করেন। ডা. সাব্বির চাকরিচ্যুত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই চিকিত্সক ডা. আয়ুব আলী। কয়েক দফায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাগিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতিসহ নানা সুবিধা।
এদিকে, ডা. আয়ুব আলীর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। রুলে স্বাস্থ্যসচিব, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকরী পরিচালক (প্রশাসন), প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিচালনা বোর্ড, নিয়োগ কমিটি-১ এবং আয়ূব আলীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু রুল জারির চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার আগেই গত রবিবার ডা. সাব্বিরকে চাকরিচ্যুত করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের অনেক চিকিত্সক। একইসঙ্গে দফায় দফায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠা সেই চিকিত্সকের ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করায় নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শাফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, আমরা এখনো উচ্চ আদালতের কোনো কাগজ হাতে পাইনি। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
ডা. সাব্বিরের চাকরিচ্যুতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ডা. আয়ুব বহাল তবিয়তে কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এখন পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত হচ্ছে না তা কিন্তু বলা হয়নি।
জানা গেছে, বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত অন্যের গবেষণা প্রতিবেদন নকল করেছিলেন ডা. আয়ুব আলী। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন ডা. সাব্বির। শুনানি শেষে গত ২৮ জুন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃপক্ষকে কারন দর্শানোর রুল জারি করে হাইকোর্ট।
শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডা. আয়ুবের এই চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। এমনকি তাকে একবারের জন্য ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডা. আয়ুব গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিতর্কিত এই চিকিত্সক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ২০০৭ সালে শিশু হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ২০১৬ সালে নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পান। নিয়ম অনুযায়ী মেডিক্যাল অফিসার থেকে রেজিষ্ট্রার হিসেবে তার পদোন্নতি পাবার পরই তার সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার কথা।
আদালত ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান শিশু হাসপাতালে এমএস সম্পন্ন করেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘patio repair’| আর সেই গবেষণার বেশীরভাগ তথ্য, পরিসংখ্যান, কেস স্টাডি এবং ফলাফল নকল করে পরবর্তীতে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের ইস্যু-৩১, ভলিউম-২ জার্নালে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ডা. আয়ুব। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তিনি রেজিষ্টার না হয়েই সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হন।
নেপাল মেডিক্যাল কলেজ টিচিং হাসপাতালের জার্নালে প্রকাশিত শিশু সার্জারি বিভাগের ডা. জেসমিন ব্রজাচারিয়ার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘surface staroid in microfelic hypospadias’’। তা প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে। অথচ একই টাইটেল এবং বিষয়বস্তু হুবুহু নকল করেন ডা. আয়ুব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ (স্বাচিপ) শিশু হাসপাতাল ইউনিটের সভাপতি ডা. আয়নাল হক বলেন, ডা. সাব্বিরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারা কী কারণে তাকে অবসরে পাঠিয়েছেন সেটা আমার জানা নেই। গবেষণা কর্ম চুরির যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটা আদালতে বিচারাধীন। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।
এদিকে, রিটকারীর আইনজীবী গোলাম রব্বানী শরীফ বলেন, রুল জারির পরও জবাব না দিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো ডা. সাব্বিরকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হবে।
এমবি
