২২ দিন পরে ফের সচল হচ্ছে বরিশাল নদী বন্দর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শেষে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৮ দিনের জন্য শিথিল করে বৃহস্পতিবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল।
২২ দিন বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ চালু হওয়ার খবরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নৌশ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এর আগে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রায় দেড় মাস লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিলো।
নৌপথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা দেওয়ার পর বুধবার সকাল থেকেই নৌবন্দরে অবস্থানরত নৌযানগুলো ধোয়ামোছার কাজ শুরু করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা আসার খবরে ছুটিতে থাকা নৌশ্রমিকদেরও দ্রুত কর্মস্থলে আসার জন্য বলা হয়েছে।
লঞ্চ ধোয়া মোছার কাজে ব্যস্ত থাকা পারাবত-৯ লঞ্চের শ্রমিক আব্দুল আজিজ বলেন, অনেকদিন লঞ্চ ঘাটে ছিলো। ধুলা ময়লা পড়েছে। যেহেতু বৃহস্পতিবার থেকে এগুলো চলাচল করবে তাই সাবান, পানি দিয়ে ধোয়া মোছার কাজ করছি।
লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে নৌশ্রমিকরা বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কয়েক ধাপে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে কোন সহয়তা পাইনি। লঞ্চে যারা নির্দিষ্ট স্টাফ আছে শুধু তারাই বেতন পেয়েছে। বাকিরা সবাই অন্য কাজ খুঁজে নিয়েছে। জানিনা কদিনের জন্য অনুমতি মিলেছে। আবার লঞ্চ বন্ধ হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবেনা।
বরিশাল বিভাগীয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশালের সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করবে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে এবং ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়ে যাত্রী সেবা দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে লঞ্চ চলাচল করার বিষয়ে সিদ্ধা ন্ত নিয়েছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের মানামী লঞ্চের ম্যানেজার ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় আমরা যাত্রী সেবা প্রদান করবো। যেহেতু ঈদে একটা আলাদা চাপ থাকে সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমরা যাত্রীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি কয়েকদিন লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমরা লঞ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, লঞ্চের স্টাফদের দিয়েই হবেনা পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতা আমরা কামনা করছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশালের উপ-পরিচালক ও নদীবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অবশ্যই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চগুলোকে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। পাশাপাশি প্রত্যেক যাত্রী যাতে মাস্ক পরিধান করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন সে বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী না নিতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা করছি।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে বলেছে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে লঞ্চ পরিচালনার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ২১ দিন পর বুধবার কাউন্টার খোলার সাথে সাথে লঞ্চের আগাম কেবিন টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী আগাম টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ টিকিট পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে আগাম টিকিট বুকিং নিয়েছেন তারা। আগের চেয়ে চাপ কিছুটা কম হলেও প্রথম দিনেই আগাম টিকিট বুকিং শেষ হয়ে গেছে।
এমবি