দক্ষিণাঞ্চলে কুরবানির পশু সংকটের আশঙ্কা

ঘনিয়ে আসছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। ত্যাগের মহিমায় আগামী ২১ জুলাই পশু কুরবানির মধ্যে দিনটি উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলামনরা। তাই এবারও বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে কুরবানির পশুর চাহিদা পূরণে বসছে পশুর হাট।
তবে করোনাকালীন এবারের কুরবানিতে দক্ষিণাঞ্চলে পশুর সংকট তৈরি হতে পারে বলে ধারণা প্রাণিসম্পদ বিভাগের। কেননা এ অঞ্চলে প্রতি বছর কুরবানিতে যে সংখ্যক পশু জবাই হচ্ছে, তার থেকে এ বছর উৎপাদন দ্বিগুণ কম বলে জানিয়েছেন তারা। ফলে কুরবানির জন্য উত্তরাঞ্চলের গরুর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘গত বছর করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের মধ্যে ঈদ উল আযহা অর্থাৎ কুরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ওই বছর বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৭১টি পশু কুরবানি হয়। যার মধ্যে ষাঁড়/বলদ ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৭৬৬টি, মহিষ এক হাজার ১০৯টি, গাভী/বকনা ২৩ হাজার ৪০১টি, ছাগল এক লক্ষ ৬৩ হাজার ৫২৯টি এবং ভেড়া এক হাজার ৩৬৬টি।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই কুরবানির ঈদ। দফায় দফায় লকডাউন, বিধি-নিষেধের কারণে মানুষ অনেকটাই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় আছেন। তাই এবারের ঈদে কুরবানির পশুর চাহিদা গত বছরের থেকে কিছু কমতে পারে। তার পরেও যে চাহিদা রয়েছে তা পূরণে ব্যর্থ হবে বরিশাল অঞ্চলের খামারিরা।
এর কারণ উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মনমথ কুমার সাহা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এ বছর দক্ষিণাঞ্চলের খামারগুলোতে পশুর উৎপাদন কিছুটা কম। গত বছর যেসব পশু বিক্রি হয়নি সেগুলো এবার পুনরায় হাটে তোলা হবে।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারি রয়েছেন। করোনাকালিন যাদের চাষাবাদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। ওইসব খামারে ১৫ জুলাই পর্যন্ত নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে মাত্র এক লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি গবাদি পশুর হৃষ্ট-পুষ্ট (মোটা-তাজা) করা হয়েছে। যা আসন্ন কুরবানিতে যে চাহিদা রয়েছে তার থেকে দ্বিগুণেরও কম।
হৃষ্ট-পুষ্টকরণ গবাদি পশুর মধ্যে ষাঁড় ৭৪ হাজার ৪০৩টি, বদল ১৮ হাজার ৩টি, গাভী ১৩ হাজার ৪২৪টি, মহিষ ৩ হাজার ১৮০টি, ছাগল ২৭ হাজার ৮৪০টি, ভেড়া এক হাজার ৫০৬টি এবং অন্যান্য গবাদি পশু রয়েছে ১৮টি।
তবে এর মধ্যে কুরবানিতে জবাই করার জন্য এক লক্ষ ২৪ হাজার ৯৩২টি ষাঁড়/বলদ, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়া উপযুক্ত পশু হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা যে ১৩ হাজার ৪২৪টি গাভী রয়েছে সেগুলো খামারে মোটাতাজা করা হলেও তা দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বরিশাল অঞ্চলের খামারে যে গবাদি পশু উৎপাদন হয়েছে তার মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৬ হাজার ৬১৯টি, পিরোজপুরে ১৩ হাজার ২৮৪টি, পটুয়াখালীতে ২৭ হাজার ৫০৪টি, বরগুনায় ১৭ হাজার ২০টি, ঝালকাঠিতে ১১ হাজার ৫১৯টি এবং ভোলা জেলায় ২২ হাজার ৪২৮টি। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ষাঁড় এবং ভোলা জেলায় বলদ গরু উৎপাদন বেশি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন, ‘বরিশাল অঞ্চলে খামারগুলোতে যে পশু উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে এই অঞ্চলে কুরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এর বাইরে বরিশাল অঞ্চলে কিছু সৌখিন চাষিরা রয়েছেন, কিছু সময় আগে গরু এবং ছাগল কিনে তা কুরবানিতে বিক্রি করছে। এর পাশাপাশি গৃহস্থেরও কিছু গরু রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ গরুর চাহিদা পুরণ হয়। বাকি ২০ শতাংশ পশু আসছে যশোর এবং ঝিনাইদাহ্ সহ উত্তরাঞ্চল থেকে।
এ দিয়েই বরিশাল অঞ্চলে কুরবানির পশুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এর পরেও বিক্রি করতে না পেরে প্রতি বছর বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাট থেকে পশু ফেরত যাচ্ছে। গত বছরেও ২৩ হাজার ৪৮৩টি গরু এবং ছাগল হাটে বিক্রি করতে পারেনি বলে ফেরত গেছে। তবে বাইরের অঞ্চলের গরু আসা বন্ধ হলে দক্ষিণাঞ্চলের খামারিরা পশু বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো বলে জানান প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা।
এমবি