বানারীপাড়া চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের দাবিতে ইউএনও-ডিসির কাছে অভিযোগ

বরিশালের বানারীপাড়ায় উপজেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হুমায়ুন কবির হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি চাখার ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুকে বরখাস্তের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা ও বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের কাছে অভিযোগ আকারে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
হত্যা মামলার বাদী ও নিহতের ভাই সৈয়দ তরিকুল ইসলাম আপনুর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুর বিরুদ্ধে আদালতে দাখিলকৃত বানারীপাড়া থানার অভিযোগপত্র (চার্জশিট), মামলার কপি ও এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপিসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি সহকারে লিখিত অভিযোগ করেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, তার নিরপরাধ রোজাদার ভাইকে সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুসহ অপর আসামিরা প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার করে হত্যা করেন। একজন ঘাতকের কাছে এলাকার মানুষের জানমাল নিরাপদ নয় উল্লেখ করে জনস্বার্থে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে হত্যা মামলার বাদী সৈয়দ তরিকুল আপনূর বলেন, সন্তানকে হত্যা করে অশীতিপর বৃদ্ধ মায়ের বুক খালি ও ভাই-বোনদের নিঃস্ব করে ঘাতকরা বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াবে আর বিচারের বাণী কি নিরবে নিভৃতে কাঁদবে? ২০১১ সালে সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু চাখার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে শপথ ভঙ্গ করে আমার নিরপরাধ ভাইকে হত্যা করেছে, তিনি দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ১৩ জুলাই শপথ নিয়েছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা বলেন, চাখারের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুর ব্যপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা চেয়ে চিঠি লেখা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের ৩৪ ধারায় কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে অথবা অপরাধ আদালত আমলে নিলে সেক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে ওই চেয়ারম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে। এ বিধান থাকলেও ২০১৩ সালে চাখারের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিলের পরে ওই সময় তিনি বহাল তবিয়তে প্রায় তিন বছর (২০১৩-২০১৬) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালণ করে তার মেয়াদ শেষ করেন।
তখন বরখাস্তের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে তিনি নির্দেশনা চেয়ে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ শাখায় চিঠি পাঠান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণা লয়ের তৎকালীণ সিনিয়র সচিব নুরুল বাছির এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০১৩ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে উপজেলা জাসদের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রোজাদার সৈয়দ হুমায়ুন কবিরকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোহার পেরেক ঢুকিয়ে ও অন্ডকোষ থেতলে দেওয়াসহ মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বরিশাল জেলা যুগ্ম জজ আদালতে বিচারাধীন এবং টুকুসহ অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন। সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু ২০০১ সালে চাখার ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি হুমায়ুন কবির সিকদার হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বানারীপাড়া থানায় অপরাধমূলক বেশ কয়েকটি মামলা ও জিডি হয়েছে।
এমবি