ঢাকা সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

বরিশালে ‘নগদ’র ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক ফাঁস করলো পুলিশ

বরিশালে ‘নগদ’র ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক ফাঁস করলো পুলিশ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

নগরীতে মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ কর্মীর ৮ লক্ষ টাকা ছিনতাই নাটকের রহস্য উদঘাটন করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মেট্রোপলিটন পুলিশ নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সহযোগিতায় এই রহস্য উদঘাটন করে তারা। দেনার টাকা শোধ করতেই মাদকাসক্ত ওই কর্মী ব্লেড দিয়ে নিজের হাতে নিজে জখম করে ৮ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজান বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনায় ‘নগদ’ এর অভিযুক্ত ডিএসও নুরুল্লাহ মোমেন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে আত্মসাতের ৮ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ এবং ছিনতাই নাটকে ব্যবহৃত ব্লেডটি উদ্ধার করেছে কোতয়ালী পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ‘নগরীর কলেজ এভিনিউ এলাকার বাসিন্দা যুব বয়সী নুরুল্লাহ মোমেন গত ছয় মাস ধরে মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ এর বিপণন কর্মকর্তা (ডিএসও) হিসেবে চাকরি করে আসছিলেন। তিনি বাকেরগঞ্জ উপজেলার মধ্য নিয়ামতি গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। গত ১৮ জুলাই সোমবার তিনি ওই কোম্পানির ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের নাটক সাজান। খবর পেয়ে পুলিশ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে তিনি জানান, ‘মাস্ক পরা তিনজন যুবক এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সাথে থাকা নগদের ৮ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নুরুল্লাহ্ মোমেন এর অভিযোগ এবং ঘটনার বর্ণনা শুরু থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। তাই ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশে আমরা রাতভর তৎপরতা চালাই। ওই রাতে ঘটনাস্থলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করা হয়।

ওসি বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী যেখানে এবং যেসময় ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে আসলে সেখানে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেইনি। বরং নুরুল্লাহ্ মোমেন নিজেই ‘নগদ’র টাকা আত্মসাত করতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছেন। যার পেছনে ‘নগদ’র স্থানীয় ম্যানেজারেরও যোগসাজশ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, মোমেন চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে থেকেই বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করেন। চাকরিতে ঢোকার পরে তিনি ‘নগদ’ এর ডিস্ট্রিবিউটর ‘জি টু কনসোর্টিয়াম’ এর মার্কেট থেকে বিভিন্ন সময় ধীরে ধীরে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা সরিয়ে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করেন। আত্মসাতকৃত ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার হিসাব বোঝানোর জন্যই এই ছিনতাইয়ের নাটক সাজানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ আরও জানায়, ‘এক লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে মোমেন যখন তার অফিসের অপর ডিএসও হাফিজের মোবাইলে ফোন দিয়ে ম্যানেজার সেলিম খানকে ঘটনা জানান তখন ম্যানেজার সেলিম খান তাকে এক লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার পরিবর্তে টাকার অংক বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা বলতে বলেন।

তার শেখানো কথা অনুযায়ী মোমেন পুলিশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ৮ লক্ষ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে দাবি করেন।

ওসি জানিয়েছেন, টাকা আত্মসাত করতে ব্লেড দিয়ে নিজের হাতে নিজেই জখম করে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছেন মোমেন। এমনকি পরে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি ফার্মেসী থেকে হাতে ব্যান্ডেজ করেছেন বলে মোমেন আমাদের জানিয়েছে।

ওসি বলেন, ‘নুরুল্লাহ মোমেন মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেছেন। পাশাপাশি অনেক টাকা দেনা তার। ওই টাকা পরিশোধ করতেই ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ঘটনাটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে প্রকাশ করে নগরীতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। যেটা আমরা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি।

নুরুল্লাহ মোমেন কিভাবে এতো টাকা দেনা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশকে কোন তথ্য দেননি জানিয়ে ওসি নুরুল ইসলাম ধারণা করে বলেন, ‘নুরুল্লাহ মোমেন মূলত মাদকাসক্ত। মাদক গ্রহণ এবং সেবন করতে গিয়েই হয়তো দেনায় জড়িয়েছেন। সেই দেনা শোধ করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের নাটক সাজালেও পুলিশের চৌকসতার কারণে শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। 

এই ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন