আগৈলঝাড়ায় কাগজে কলমে একাধিক কমিটি, লকডাউন বাস্তবায়নে অনীহা

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি থাকলেও তা কেবল কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বর ও স্থানীয় গণ্যমান্য সামাজিক ব্যক্তিরা ওই কমিটির সভাপতিসহ সদস্য থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের অনীহার কারণে মাঠ পর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের কঠোর লকডাউন। ফলে আগৈলঝাড়া উপজেলাতে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযানের স্থান ত্যাগ করার পর পরই ওই সকল হাট বাজারে দোকানপাট খোলা রাখা ও সড়কে মানুষের অবাধ বিচরণ কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে না। উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার চায়ের দোকান খোলার সরকারী কোন নিয়ম না থাকলেও তারা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখছেন। দোকানে দরজা বন্ধ করে ভিতরে চলছে মোবাইল ফোনে লুডু খেলার আড্ডা। এমনকি বাজি ধরে চলে খেলা। এসকল দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম জানান, করোনা ভাইরাস জনিত রোগের বিস্তার ঠেকাতে সরকারী নির্দেশে তাঁর অফিসের আদেশ অনুযায়ি গত ১২ জুলাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক রয়েছেন পদাধিকার বলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানবৃন্দ ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন ইউনিয়নের সচিবগণ।
কমিটির অপর সদস্যদের মধ্যে সাধারণ কোটার ৯জন নির্বাচিত সদস্য, সংরক্ষিত কোটার ৩জন নারী সদস্য, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিকেল কর্মকর্তা, থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, স্কুল শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, আনসার সদস্য, চৌকিদারসহ মোট ৩২জন।
অনুরূপভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য আহ্বায়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করার পাশপাশি শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গকে নিয়ে করা হয়েছে ১২ সদস্যের কমিটি।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি থাকলেও কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করায় করোনায় গণমানুষের সংক্রমণের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে সরকারের কঠিন লকডাউন কোন কাজেই আসছে না।
আরও অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিরা কার্যকর কোন ভূমিকা না রেখে বরং তাদের এলাকার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে প্রতিনিয়িত বাজার চালানোসহ সাপ্তাহিক হাট পর্যন্ত বসাচ্ছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, করোনা সংক্রমণ কমার পরেই হয়তো সরকার নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের হিসাব নিকাশের কারণে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে রাস্তায় ওঠা থেকে বিরত রাখতে তাদের বিরাগ ভাজন হতে চাইছেন না তারা। যতটুকু পারেন ততটুকু তারা বাস্তবায়ন করছেন। ভোটের প্রত্যাশায় সরকারী নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, তিনি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। তবে লোকজন সচেতন না হওয়ায় এবং মাঠ পর্যায়ে কমিটির লোকজন তাদের কার্যক্রমে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট না হওয়ায় কোথাও কোথাও লকডাউননের ব্যত্যয় ঘটছে।
রাজিহার ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও ওই ইউনিয়নের সচিব গৌতম চন্দ্র পাল জানান, তিনি সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য পরিষদের সকল সদস্যসহ গ্রাম পুলিশ সদস্যদের বলে আসছেন। তাঁরা মাঠে কাজ করছেন। তবে মানুষ এই মহামারীর জন্য এখনও সচেতন নয়। তাই তাঁরা নির্দেশনা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন, অকারণে হাট বাজারে উঠছেন। প্রত্যেক বাজারে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা লোকজনকে নিষেধ করা সত্বেও তাদের কথা কেউ মানছে না। গৌতম পাল আরও বলেন, গ্রাম পুলিশ, ইউপি সদস্যদের সাথে যদি থানার স্টাফরা মাঝে মধ্যে হাট বাজারগুলোতে দেখ ভাল করতেন তবে সরকারী বিধিবিধান অনেকটাই প্রতিপালন করতো সাধারণ লোকজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারমান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত আগৈলঝাড়া উপজেলায় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী যথাযথভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন না হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার সাথে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির সাথে সমন্বয়হীনতার জন্য এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। কাগজে কলমে কমিটি করে ছেড়ে দিলে হবে না, এজন্য অন্তত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের নিয়ে একটি যৌথ সভা করা উচিত। এর সাথে থানা প্রশাসনকে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগী হতে হবে। যাতে সরকারী নির্দেশনা তাদের সামনে তুলে ধরে তা তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এমবি