ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • বরিশালে ১০০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক  রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়ি ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাজ্যসহ ১১ দেশ ৩ দফা দাবিতে দুই ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ ববি শিক্ষার্থীদের ববি ছাত্রলীগ নেতার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা বরিশাল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল থেকে ৪টি স্মার্ট টিভি নিয়ে উধাও পর্যটক  সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হলে ব্যবস্থা নেবে দুদক সৌদিতে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার ভোলায় নদীভাঙন রোধে পদক্ষেপের দাবিতে পাউবো কার্যালয় ঘেরাও
  • পুরোনো প্লাস্টিকজাত দ্রব্য বার বার রিসাইকেলিং করে ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

    পুরোনো প্লাস্টিকজাত দ্রব্য বার বার রিসাইকেলিং করে ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    এস. সমদ্দার, ভাণ্ডারিয়া
    পিরোজপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাণ্ডারিয়াসহ উপকূলীয় দক্ষিণের অন্য উপজেলার পরিত্যক্ত প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ঢাকা, চিটাগং কোম্পানীর পর চীন ভারতে রিসাইকেলিং হয়ে ফের দেশি কোম্পানীতে তৈরী হয় নতুন প্লাস্টিকজাত বোতল, চেয়ারসহ অন্যান্য বিক্রিদ্রব্য জিনিস। এমনি একটি ছোট শিল্পের মাধ্যমে এ কাজ চলে বেশ কয়েক বছর ধরে ভা-ারিয়ায়। অতি সম্প্রতি ভা-ারিয়া পৌর সভার ১নং ওয়ার্ড লক্ষ্মী পুরা গ্রামের কচাঁ নদীর শাখা পোনা নদী তীরবর্তী এলাকায় এমন একটি ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় পুরোনো প্লাস্টিক ভাঙার দৃশ্য।

    বেশ অনেক জায়গা জুড়ে পানি, বিভিন্ন সফট ড্রিংক্স এর খালি বোতলের স্তূপ ছাড়াও প্লাস্টিকের ভাঙা চোয়ার, টেবিল, গামলা, থালা এবং পুরোনো লোহার রড, পরিত্যক্ত টিনসহ লৌহজাত দ্রব্য ও রয়েছে সেখানে। এসময় দেখা যায় এক নারী শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন কাজ করছে। কেউ প্রকার ভেদে মাল আলাদা করছে,কেউ পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পরে সে গুলি মেশিনে ম্যান মেশিনে টুকরো করে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেড আধাপাকা ভবনের এক পাশে হিসেব নিকেশ করার জন্য মালিক বসেন। আর একটি কক্ষে মেশিনে বোতল গুলি ভাঙার কাজ করছে এবং অন্যরা তাদের স্ব স্ব কাজে ব্যস্ত।

     খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিলেট, ঢাকা থেকে ২৫/৩০ জন শ্রমিক বেশ কয়েক বছর ধরে ভা-ারিয়ায় আসেন এই ভাঙ্গারির ব্যবসা করতে। তারা পৌর শহরের ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানীয় নাইয়া বাড়ি নামে খ্যাত স্থানে টিনসেডের ঘর ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা করেন। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সংগ্রহ করেন এসকল পুরোনো প্লাস্টিক লৌহ জাত দ্রব্য। বাহিরাগতরা ছাড়াও স্থানীয় কিছু শ্রমিক গ্রাম থেকে তারা এসকল জিনিস প্রকার ভেদে ১২/১৫/টাকা কেজি দরে ক্রয় করে এখানে ভাই ভাই প্লাস্টিক মিলে সেগুলি ২০/২৫/৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। এই মিলটি প্রায় ৪/৫ বছর পূর্বে ছিল ভা-ারিয়া-কাঠালিয়া সড়কের ধোপা বাড়ি সংলগ্ন একটি ভবনে। ক্রমশ মাল বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ওই জমির মালিক জমি বিক্রি করে ফেলায় সেখান থেকে এই স্থানে আনা হয়েছে।

    আলাপকালে জানালেন ভা-ারিয়ার লক্ষ্মী পুরা গ্রামের ক্ষুদ্র শিল্পের প্রোপাইটর মো. কুদ্দুছ সিকদারের মেসার্স ভাই ভাই প্লাস্টিক মিলের মেশিনম্যান সিলেটের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা মো. তপু হায়দার(৩১) এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তিনি গত এক মাস পূর্বে এখানে মাসিক ২০হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। তিনিসহ ২০ জন এখানে কাজ করেন। ২০জনের মধ্যে সাতক্ষীরা, সিলেট,ঢাকাসহ বাহিরের ৫ জন পুরুষ এবং ১৫জনের মধ্যে ৫জন নারী এবং ১০ জন স্থানীয়। তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা সর্বোচ্চ ২০হাজার টাকা বেতন রয়েছে এক এক জনের। এরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে থাকে। তবে দুপুরের খাবারের জন্য ১ঘন্টা বিরতি থাকে।

    তাদের মধ্যে কেউ স্তূপকৃত বোতলজাত মালের মধ্যে (পি.বি.সি)চেক ,অন্যান্য মাল আলাদা করা এবং পানি দিয়ে ধোয়ার কাজ শেষে মেশিনে টুকরা করার পর প্যাকেটজাত করে সে গুলি ঢাকার ইসলামাবাদ এবং চিটাগংয়ে বড় কোম্পানীতে বিক্রি করা হয় ৩০/৪০টাকা কেজি দরে। এই সকল ভাঙ্গারির আমদানি সম্পর্কে জানতে চাইলে তপু জানান, আগে কম হত। করোনার কারণে মানুষের বাসা বাড়ি সহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল নষ্ট হওয়ায় এখন বেশি। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় ২৫/৩০টন মাল ঢাকা এবং চিটাগংয়ে পাঠানো হয়।

    ঢাকা, চিটাগং কোম্পানী থেকে সেগুলি পাঠানো হয় চীন,ভারত সহ অন্যান্যদেশে। সেখানে অত্যাধুনিক মেশিনে বোতল গুড়ো করার পরে মণ্ড তৈরী করা হয়। তা থেকে সুতা,উন্নতমানের দামি শাড়ি কাপড়, কম্বল তৈরী হয়ে আসে দেশের বাজারে। বোতল এবং লৌহজাত দ্রব্যের মণ্ড বাংলাদেশের আর.এফ.এল কোম্পানী সহ অন্যান্য কোম্পানী বিদেশ থেকে ক্রয় করে নিজেদের কোম্পানীতে নিজেদের ব্র্যান্ডের জিনিস তৈরী করেন বলেও জানান মো. তপু হায়দার। তপু আরো জানান, এখানে সকল খরচ বাদ দিয়ে মালিকের প্রতি মাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।

    প্রোপাইটর মো. কুদ্দুছ সিকদার জানান,সরকারি নির্দেশনা মেনে মিলটি পরিচালনা করে আসছি। তবে আগে মোটামুটি ভাল লাভ হত বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা লাভ থাকেনা।

    এবিষয়ে স্থানীয় সরকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রসাশক সীমা রানী ধর জানান, মূলত পুরোনো প্লাস্টিকজাত দ্রব্য বার বার রিসাইকেলিং করে ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর পৌরসভার মধ্যে যত্রতত্র পরিত্যক্ত ভাবে প্লাস্টিকজাত দ্রব্যসহ অন্যান্য ময়লা আবর্জনা যে জনবল আছে তা দিয়ে সার্বিক ভাবে পরিষ্কার রাখার যথাসাধ্য চেষ্টার কমতি নেই। প্লাস্টিকজাত দ্রব্য বার বার রিসাইকেলিং এর বিষয়ে যদি কেউ করে থাকে তবে তাকে অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মেনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন ভাবে রিসাইকেলিং করার কোন সুযোগ নেই।

     


    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ