ঝুপড়ি ঘরে বিধবা রানীর বাসবাস


পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর কাকড়াবুনিয়া গ্রাম। এ গ্রামে বাস করেন এক অসহায় বিধবা কাজল রানী। ছেলে সন্তান না থাকায় অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে তার। ২০০৪ সালে স্বামী সুণীল গোলদার মারা যাওয়ার পরে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিনাতিপাত করলেও বয়সে ভাড়ে এখন আর কাজ করতে পারেন না।
স্টোক করে ঘরে পড়ে ছিলেন কয়েক মাস। প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। এই কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করছিলেন অসহায় কাজল রানী। একটি ঘর পাওয়ার আশায় অনেকের কাছে গেলেও মেলেনি। তার এই আবেগ মাখা আর্তনাদ হয়তো কারো কাছে পৌঁছাবে না বলে মনে করেন তিনি।
তিনি মনে করেন, টাকা ছাড়া ঘর পাওয়া যায় না। তাই টাকার অভাবে ঘরও পাচ্ছেন না।
কাজল রানী বলেন, স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৮ বছর। তখন মেয়েটি বয়স আট থেকে ৯ বছর। অন্যের কাজ এমনকি রাস্তায় কাজ করে মেয়েটিকে লেখা-পড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতে হয়েছে। মেয়েটিকে একটি ভালো জামাও পড়াতে এবং স্কুলের ফিও দিতে পারেনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ঘরে বাস করছি। ধার-দেনা করে মেয়েটিকে গোপালগঞ্জে বিয়ে দিলেও জামাই আর আমাকে কত দেখবে। যা দেখে তা পেটের ছেলের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ শোক। আমার থাকার মতো কোনো ঘর নাই। তার আশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, মুজিববর্ষে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে নতুন একটি ঘর পাবেন। যে ঘরে একটু শান্তিতে থাকতে পারবেন। কিন্তু এমন আশাও বাস্তব হওয়া যেন অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। ঝড় বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভাঙ্গা টিনের ঝুপড়িতে মানবেতর জীবনযাপনই যেন কাজল রানীর নিয়তি। তার আক্ষেপ, সরকার এত ঘর তৈরি করে মানুষকে দিচ্ছে। যদি সরকারিভাবে একটি ঘর পেতাম তাহলে আমি সরকারের কাছে চির ঋণী থাকতাম।
তার মেয়ে বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় আট বছর। আমার একটি ছেলে সন্তান আছে। বাবাকে হারানোর পরে আমাকে বড় করতে কত না কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে মাকে। আমার বিয়ে হলেও তবুও আমার মায়ের কষ্ট যেন শেষ হচ্ছে না। গত বছর আমার মা স্টোক করার পরে ডাক্তার দেখাতে বরিশাল নিয়ে আসি। এখন প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকার ওষুধ দরকার মায়ের। যে কয়দিন বাঁচবেন ওষুধ চলতে থাকবে। বৃষ্টির পাঁচটি মাস মা আমার কাছে ছিল। কারণ বৃষ্টি পরার আগে আমার মায়ের ঘরে পড়ে সব কিছু ভিজে যেত। আমাদের একখন্ড জমি আছে। সেই জমিতে সরকারি ভাবে একটি ঘর পেলে মা এই বৃদ্ধ বয়সে হয়তো শান্তিতে থাকতে পারবে। আমার মা ঘরের জন্য অনেকের কাছে গেলেও সব সময়ই অর্থের কাছে হেরে গেছেন।
ইউপি সদস্য মাসকুর রহমান বলেন, আসলেই বিধবা কাজল রানী অসহায় জীবন যাপন করছে। তাদের থাকার মতো তেমন ঘর নাই। তারা যদি একটি ঘর পায় তাহলে হয়ত পরিবারটির একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা: তানিয়া ফেরদৌস বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি, অসহায় পরিবার হলে সরকারি বরাদ্ধ আসলে তাকে ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এইচকেআর
