৫০-৬০ টাকার নিচে সবজিও মেলে না বাজারে
সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এই দাম কোনো কাজে আসেনি বাজারে। তাই ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত উচ্চদামেই।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি পিস ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও বরিশালে বাজারে এখনো এ তিনটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্বল্পআয়ের মানুষজন। পাশাপাশি আবার বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর পোর্ট রোড, চৌমাথা, সাগরদি ও রূপাতলীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কেজি প্রতি আলু ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ ও দেশি পেঁয়াজও ১০ টাকা বেশি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম হালিপ্রতি চার টাকা বেশি দরে ১৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল পোর্ট রোড বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা নাসিমা বেগম বলেন, সরকার বাজারে কি দাম কমাইলো, ব্যবসায়ীরা মানছে না। তাহলে আমাদের কী লাভ অইলো।
ফিরোজ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দেয়ালে পিঠ পিষে গেছে। এখন আর পারছি না। বাজারে সব জিনিসের দাম।
তিনি বলেন, আলু নিয়ে আড়তদাররা লুকোচুরি শুরু করেছে। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। এ অবস্থায় আমাদের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রিকশা চালক নাসির উদ্দিন বলেন, মোরা কোন দিন ভালো খাবার খাইতে পারি না। মোগো লাইগা আলু ডাইল আর ডিম জোটে। হেইয়া এহন যে দাম। প্রতিদিন যা রিক্সা চালাইয়া পাই। হেই টা দিয়া বাজারে গিয়া একটা কেনলে আর একটা না কিইন্না বাড়ি যাই।
নগরীর সাগরদী বাজারের তালুকদার ভ্যারাইটিস স্টোরে প্রতি হালি ডিম ৫২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সে হিসাবে প্রতি পিসের দাম ১৩ টাকা। অন্য দোকানগুলোতেও দাম একই।
তালুকদার ভ্যারাইটিস স্টোরের বিক্রয়কর্মী তালুকদার রেজাউল হাসান বলেন, ডিম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেটা কার্যকর করা সম্ভব নয়। কারণ পাইকারিতে ডিমের দাম নির্ধারিত নয়।
এদিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু মিলছে না ৪০-৪৫ টাকার কমে ।
চৌমাথা ও পোর্টরোড বাজারের ব্যবসায়ী নয়ন খান, আব্দুর রশিদ বলেন, আলু-পেঁয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন পর্যন্ত একদিনও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
উল্টো এসময়ে দাম আরও বেড়েছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। অথচ পাইকারিতেই দাম কমেনি। বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করলে তো খুচরা ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়তে হবে। খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে ২-৩ টাকা লাভ পাচ্ছেন। কিন্তু পাইকারিতে প্রতি মুহূর্তে দাম ওঠানামা করছে।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।
রূপাতলী বাজারে মুরগি বিক্রেতা সোহেল বিশ্বাস বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। পাইকারি বাজারে দাম কমায় আমরাও দাম কমিয়ে বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সোনালি মুরগিরও দাম কমেছে। সোনালি ৩০০ টাকা, কক ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে এসব বাজারে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে গতকাল এক লাফে কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গত সপ্তাহে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
কলার হালি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ১০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ধনে পাতা ২০০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ বিক্রি হচ্ছে।
তবে শীতকালীন সবজি দাম কিছুটা কমেছে। ছোট বাঁধাকপি ৪০- ৫০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১২০-১০০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা এবং গাজর ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরজেএন