ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

Motobad news

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রোববার নতুন কর্মসূচি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রোববার নতুন কর্মসূচি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে নতুন কর্মসূচি দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি ও গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বেলা ১১টায় পদযাত্রা শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, শেরে বাংলা কলেজসহ ঢাকার সব প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে বলে জানান নেতারা।

এছাড়া দেশের জেলাগুলোতেও গণপদযাত্রা এবং জেলা প্রশাসকের কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। তবে এদিন রাজধানীসহ সারাদেশে কোনো অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে কোটার যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দেন তারা।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। 

এসময় আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত কয়েক দিন পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষে থেকে আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমের কাজেও পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বৃহস্পতিবার সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের সাজোয়া যানে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত আসাসিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলটি করেন পুলিশের ড্রাইভার খলিলুর রহমান।

এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা বলেন, শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার অডিও রেকর্ড রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন ছাত্ররা কোনো হামলা করেনি। তারপরও কোন উদ্দেশে এই মামলা করা হয়েছে? মামলাটি মিথ্যা উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

তারা পুলিশের উদ্দেশে বলেন, মামলা হলে নামে মামলা দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার ও দাবি আদায় না হলে সাধারণ মানুষকে নিয়ে বড় আন্দোলনে নামা হবে। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরও বিচার দাবি করা হয়।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকার আলোচনা না করে ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে বুমেরাং হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা হবে না।

এসময় শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনের সময় কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যায়নি। শিক্ষকদের সঙ্গে ছিলো শিক্ষার্থীরা। এখন দেখার বিষয় শিক্ষকরা কী করে। শিক্ষকরা ক্লাসে যাবে না এমনটাই আশা করেছেন কোটাবিরোধীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ২০১৮ সালে এ ধরনের ঘটনা দেখেছি। আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। সরকার যদি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে তাহলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমাদের ছাত্র ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এটা চলমান থাকবে। শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন শেষ করে ক্লাসে ফিরে গেলেও আমরা ফিরবো না। 

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার, যৌক্তিক আন্দোলন দমনে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদি আমাদের দাবি আদায় না হয়, আমরা বৃহত্তর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

পহেলা জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। দুই জুলাই থেকে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। 

২০১৮ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশ নিয়ে হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ জুন হাইকোর্ট পরিপত্রটি বাতিল করে। রায়টি আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়। পরে দুই শিক্ষার্থীর রিটে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। তবে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন।

সাত জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি ঘোষণা করে। তা হলো- সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন