বেতাগী হাসপাতালের বরাদ্দে হরিলুটের অভিযোগ


বরগুনার বেতাগী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা খুবই নাজুক। সবকিছুই নামে আছে, কাজে নেই। অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকালে মনে হবে সেটি নিজেই অসুস্থ, মেঝেতে নোংরা পানি, স্যাঁতসেঁতে অবস্থা, ভাঙা জানালা ও মশা-মাছিতে পরিপূর্ণ একটি কক্ষ। শুধু এটিই নয়, হাসপাতালের বিভিন্ন খাতে প্রতি বছর যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয় তার মধ্য থেকে হয় পুকুর চুরি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হাসপাতালটির উন্নয়নের জন্য ওষুধ ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ লাখ ২৬ হাজার ৯০০ টাকা। মোট বরাদ্দের ৭০ ভাগ ওষুধ ক্রয়ের জন্য। এর মধ্যে ইডিসিএল ৭৫ ভাগ ও লোকাল ক্রয় ২৫ ভাগ, এমএসআর যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ১০ ভাগ, গজ ব্যান্ডেজ তুলা ক্রয়ের জন্য ৫ ভাগ, লিলেন ক্রয়ের জন্য ৫ ভাগ, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট (এক্স-রে ফিল্ম, ইসিজি পেপার) ক্রয়ের জন্য দুই ভাগ, আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য দুই ভাগ, এমএসআর যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য দুই ভাগ, অক্সিজেন ও অন্যান্য গ্যাস সরবরাহ বাবদ এক ভাগ, সংগ্রহ ও সরবরাহ এক ভাগ, এমএসআর নির্বাচনী কমিটির ব্যয় ধরা হয়েছে দুই ভাগ টাকা। তবে এসব বরাদ্দ যেন কাগজ-কলমে সীমবদ্ধ। বাস্তবে এসব বরাদ্দের সিংহভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে।
হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৬-৭ বছর ধরে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট এবং টেকনিশিয়ানও নেই। সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৪ হাজার ৫৩৮ টাকা। সবচেয়ে বড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ওষুধ ক্রয়ে। তবে হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অসুস্থ রোগীর জন্য কোনো ধরনের ওষুধের ব্যবস্থা হাসপাতাল থেকে করা হয় না। সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিন্তু এ খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ পেয়েছে ২৬ লাখ ৮ হাজার ৮৩০ টাকা। এদিকে এক লাখ ৮৬ হাজার ৩৪৫ টাকার লিলেন ক্রয়ের কথা কাগজ-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। ব্যান্ডেজ, তুলা থাকতেও রোগীদের বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়। এ খাতেও বরাদ্দ এক লাখ ৮৬ হাজার ৩৪৫ টাকা। এমএসআর যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য ৭৪ হাজার ৫৩৮ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এমএসআর সব যন্ত্রপাতি নষ্ট ও অকেজো।
এছাড়া হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন থেকে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয় তা খরচ না করে আত্মসাৎ করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তেন মং বলেন, প্রায় সব মালামালই আমাদের হাসপাতালে আছে। অর্থেও কোনো এদিক ওদিক হয়নি, সব কাগজ-কলমে ঠিক আছে।
এমবি
