ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

Motobad news

কলাপাড়ায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর উদ্বোধন জুনে

কলাপাড়ায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর উদ্বোধন জুনে
ছবি : সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীতে বালিয়াতলী পয়েন্টে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলছে সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নদীর দুই পাড়ের এ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ। সড়কের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন সড়কের ইট বিছানোর কাজ শেষ হলেই কিছুদিন পরই উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই আশা করা যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা বালিয়াতলী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, ধুলাসার, ডাবলুগঞ্জ পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দুভোর্গ লাগব হবে এবং উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। খেয়ার কারণে সময় ও অর্থ দুটোই আর নষ্ট হবে না । উজ্জীবিত হবে  মানুষ।  গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে। দিনে এখান দিয়ে খেয়া নৌকায় পার হওয়া গেলে ও রাতে পারাপারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা খেয়াওয়ালাকে ডাকাডাকি করতে হয়। তাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর থাকতে হতো। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় রোগী নিয়ে পারাপারে। খোয়াখাটে দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে প্রতিদিন। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পাচঁটি ইউনিয়নের লোকজন ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও গঙামতি পর্যটকদের। একটি খেয়া ছাড়লে আরেকটি খেয়ার জন্য আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেতুটি উন্মুক্ত হলে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে। অযথা হয়রানী থেকে জনগণ রক্ষা পাবে। দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের আরও একটি সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর এলাকার মানুষ আরো কৃতজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর তিনি এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোয়ার ভাটার সমস্যা এবং মহামারি করোনার কারনে সেতুটির নিমার্ন কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুত্রে জানা গেছে, ১২০ কোটি টাকা ব্যয় এ সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর ফুটপাথসহ নয় দশমিক আট মিটার প্রস্থ হচ্ছে সেতুটি। ৬৭৭ মিটার দীর্ঘ সেতুর রয়েছে দুই পাড়ে পাঁচশ’ মিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া রজপাড়া থেকে পায়রা বন্দরের সঙ্গে নির্মিত ফোর লেন সড়ক থেকে সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে বিকল্প সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কটির প্রস্থ থাকছে ৩৩ ফুট। পায়রা বন্দরগামী ফোর লেন হয়ে সংযোগ সড়ক গিয়ে মিলছে নজরুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে। ৩৩ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কটি নির্মাণে কালভার্টসহ ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

এ সেতুর কলাপাড়ার ইটবাড়িয়া অংশে কলাপাড়া শহরের দিকে ৪০০ ফুট আর সিসি সড়ক করা হবে। এই সংযোগ সড়ক ঘেঁষে দুই দিকে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।

থাকবে সড়কের স্লোপে ছাতা, বেঞ্চিসহ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। সেতুর বালিয়াতলী এপ্রোচের নিচ দিয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড) থাকছে লালুয়া যাওয়ার সড়ক। পায়রা বন্দরগামী ফোরলেন হয়ে সংযোগসড়ক গিয়ে মিলবে নজরুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে। ৩৩ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কটি নির্মাণে কালভার্টসহ ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। শুধু কুয়াকাটা নয় এই পথে পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলসহ পর্যটনপল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিকল্প পথে গঙ্গামতি পর্যটন পল্লী হয়ে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ মিলবে আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী পয়েন্টের শুধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পেরিয়ে কুয়াকাটায় যেতে পারবেন পর্যটক-দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষ। পায়রা বন্দরের রাবনাবাঁধ চ্যানেলসহ পর্যটন পল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন , খাপড়াভাঙ্গা ১৩৬ বছরের মঠ-মন্দির ও এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় বৌদ্ধমন্দির মিশ্রিপাড়া এবং আদিবাসী রাখাইনদের হাতে তাঁতে বুনন লুঙ্গি  পর্যটকদের সহজ হবে। গঙ্গামতির সৈকত জুড়ে রয়েছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরন। রয়েছে ঝাউবনসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাইনসহ নানান প্রজাতির সারিসারি বৃক্ষ। সূর্যোদয় মত এমন দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটে শতশত পর্যটক। এখানে লাল কাকড়াসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেককে মুগ্ধ করছে।

কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা  তিন সেতু মাত্র ২১ কিমি পথে সমুদ্র সৈকতে যেতে তিনটি সেতু শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল পার হতে হয় এবং তিনটি সেতুর টোল ভাড়া দিতে বাড়তি খরচ। এখানে মাত্র একটি সেতু পার হয়ে যেতে পারবে কুয়াকাটা।

বাবলাতলা বাজারের একাধিক  ব্যবসায়ীরা জানান, এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সাগরপারের জনপথের ব্যবসায়ীরা সেই সাথে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা রাঙ্গাবালী পাঁচটি ইউনিয়নের লোকজন খুবই উপকৃত ও লাভবান হবে। আমরা সহজেই ইলিশ মাছ,ধান, চাউল সহজে মোকামে পাঠাতে পারবো।

প্রকল্প পরিচালক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মো. রুহুল আমিন জানান, সেতুর নিমার্ন কাজ প্রায় শেষের পথে চলছে সেতুর সৌন্দর্যের কাজ ও নদীর দুই পাড়ের এ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ। সড়কের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন সড়কের ইট বিছানোর কাজ শেষ হলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন