ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Motobad news

সূর্যের ঘুম ভাঙে যেখানে, সূর্য যেখানে ঘুমায়

সূর্যের ঘুম ভাঙে যেখানে, সূর্য যেখানে ঘুমায়
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সাগরকন্যা, শব্দটা শুনলেই পটুয়াখালী পেরিয়ে মন ছুটে যায় বিস্তৃর্ণ সমুদ্র সৈকতে। যেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় মিহি সূর্যোদয়, আর কোমল কমলারঙা অরুণের অস্ত যাওয়ার দারুণ মুহূর্ত। এমন বিশেষ স্বভাবের জন্যই হয়তো আদর করে সবাই কুয়াকাটাকেই সাগরকন্যা বলে ডাকে।

ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় তাই কুয়াকাট পায় বিশেষ স্থান। সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলাধারের পাশাপাশি প্রাচীন পুরাকীর্তিও মন কাড়ে কুয়াকাটায়। হাতের নাগালেই মেলে বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন কুয়া। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।

এই ১৮কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের বাঁকে বাঁকে নানা রূপ আর রঙের খেলা চলে হরদম। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় সাগরকন্যার দৃশ্যপট। আছে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। সমুদ্র পাড় ঘেঁষে বেড় ওঠা ম্যানগ্রোভ বন। ঝিঁনুক ‍কুড়াবার ক্ষণও আসে এই সাগর পাড়ে। 

আন্ধার মানিক নদীর তিন মোহনায় মিলে যাওয়া। উল্টোদিকেই ফাতরার বন, শুটকি পল্লী, লাল কাঁকড়ার চর। এদের সঙ্গ দিতেই যেনো জেগে উঠেছে চর বিজয়। সেই চরেও আছে জীববৈচিত্র্যে সমাহার। লাল কাঁকড়াসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাসা বেঁধেছে এই চরে। জিরো পয়েন্ট থেকে খানিকটা দূরেই আছে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি।

আদি বাসিন্দা রাখাইনরাও আছে কুয়াকাটার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জুড়ে। জানা যায়, প্রায় সোয়া ২০০শ বছর আগে আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে দেড়শ রাখাইন পরিবার নৌকায় ভাসতে ভাসতে কুয়াকাটার সাগরপাড়ে নোঙর করে। তাদের হাত ধরেই এখানে গড়ে ওঠে মানব বসতি। খাওয়ার নিরাপদ পানির সন্ধানে তারাই খনন করেন কুয়া। সেখান থেকেই মিঠা ও নিরাপদ পানির জোগান আসতো এক সময়। আর সেই কুয়ার নামেই পটুয়াখালীর এই সমুদ্র সৈকত ঘেঁষা জনপদের নাম হয় কুয়াকাটা, এমন জনশ্রুতি আছে। 

সনাতন নিয়ম মেনে এখনও সাগড় পাড়ের বসতি আগলে রাখা রাখাইনরা তাঁত বুনে যান। তাদের হাতে তৈরি হয়েছে ইন্দোচীনের কারুকার্যে গড়া শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার। এছাড়া কুয়াকাটার অদূরে  মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধবিহার। যে বিহারে শোভা পাচ্ছে ধ্যানমগ্ন গৌতম বুদ্ধের বিশাল মূর্তি।

কুয়াকাটাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে কুয়াকাটা দেশের পর্যটন শিল্পে দেয় বিশেষ মাত্রা।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার। জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং উপজেলা সদর কলাপাড়া থেকে ১৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটার সঙ্গে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসি-ননএসি পরিবহন বাস চলাচল করছে।

 


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন