ঢাকা বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

সাগরের ঢেউয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত

সাগরের ঢেউয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

প্রচণ্ড ঢেউ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দ্রুত শ্রীহীন হয়ে পড়ছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় এই পর্যটনকেন্দ্র হারাচ্ছে তার বিস্তৃতি ও সৌন্দর্য। একসময় পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত সৈকত এখন সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে।

সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা চোখে দেখছেন ধ্বংসের চিহ্ন। বালু ক্ষয়ে সৈকতের বুকজুড়ে উঁকি দিচ্ছে ভাঙনের ক্ষত। সাম্প্রতিক নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে ধ্বংস করেছে সৈকত-সংলগ্ন নির্মাণাধীন সড়ক। জিরো পয়েন্টের দুই পাশে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কংক্রিট ও ভগ্নাংশ। ঝুঁকির মুখে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, মসজিদ, মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা।

 
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, ফণী, বুলবুলসহ একের পর এক দুর্যোগ আর সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির চাপ বেড়ে যাওয়া সৈকতের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নারিকেল, তাল, শালবন, ঝাউবন, জাতীয় উদ্যান সবই এখন স্মৃতিচিহ্ন। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় উদ্বেগ বাড়ছে ব্যবসায়ী ও পর্যটনকর্মীদের মধ্যে।
 


কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াক)-এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সৈকতের ভাঙন এখন আর কেবল বালু সরে যাওয়ার ঘটনা নয়, বরং পুরো পর্যটন খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কুয়াকাটা হলো দেশের একমাত্র জায়গা যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখা যায়। কিন্তু সৈকতের সৌন্দর্য হারিয়ে গেলে পর্যটকদের আগ্রহও হারিয়ে যাবে। তখন শুধু পর্যটন নয়, স্থানীয় পরিবহন, হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁসহ সব খাতের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্তত কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা এই সৈকতের ওপর নির্ভরশীল। সরকার যদি এখনই স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেয়, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কুয়াকাটা ভ্রমণ মানে হবে ভাঙা বেড়িবাঁধ আর ধ্বংসস্তূপ দেখার যাত্রা।
 
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন শিল্প আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর মৌসুমে লাখ লাখ মানুষ এখানে আসেন। পর্যটক বাড়লে স্থানীয় ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। কিন্তু এখন ভাঙন দেখে অনেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। একদিকে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অনেক পর্যটক বিকল্প জায়গা বেছে নিচ্ছেন। এতে আমাদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা বাঁধ ছাড়া এ অবস্থা সামাল দেয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই সরকার জরুরি ভিত্তিতে কুয়াকাটার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিক, না হলে এখানে পর্যটন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
 


পর্যটনকর্মী কে এম বাচ্চু বলেন, আমরা যারা বছরের পর বছর ধরে কুয়াকাটার পর্যটন নিয়ে কাজ করছি, তাদের চোখের সামনে সব হারিয়ে যাচ্ছে। এই সৈকত কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয় বরং স্থানীয়দের স্বপ্ন, জীবিকা, সংস্কৃতিরও অংশ। কিন্তু ভাঙনের কারণে প্রতিদিনই সমুদ্র আমাদের বুক থেকে এক টুকরো করে কুড়িয়ে নিচ্ছে। এখনকার ভাঙন যদি ঠেকানো না যায়, আগামী এক দশকের মধ্যে কুয়াকাটা হয়তো মানচিত্রেই থাকবে না। স্থায়ী সুরক্ষা বাঁধ ছাড়া এখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কর্তৃপক্ষের দেরি মানে আমাদের সর্বনাশ।
 
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, আমরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করছি। ইতিমধ্যে সৈকতের জরুরি সুরক্ষার জন্য কিছু অস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। একটি স্থায়ী প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই টেকসই সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কুয়াকাটা সৈকত ভাঙন থেকে সুরক্ষিত হবে বলে আমরা আশা করছি।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন