কষ্টের যেন শেষ নেই রাজাপুরের নুর মোহাম্মাদের


থার উপর চালা নেই, ঘরে খাবার নেই, উপার্জনের মানুষ নেই, আয়ের কোন উৎস নেই। পচাত্তরোর্ধ্ব নুর মোহাম্মদ মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তার ঝুপড়ি ঘরে থেকে এলাকাবাসি ও তার আত্মিয় স্বজনের মুখপানে তাকিয়ে থাকতেন, কেউ হয়তো খাবার নিয়ে আসবেন।
১৫ জুন ভারী বৃষ্টি ও বাতাসে বাঁশ খুঁটির ওপরে ভাঙাচোরা টিনের চাপা দেয়া সেই ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন নুর মোহাম্মদ। তার যেন কষ্টের শেষ নেই। ঝালকাঠির রাজাপুরের মঠবাড়ি ইউনিয়নের হাইলাকাঠি গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের মৃত ময়নউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৭৫), ছোট ছেলে মিরাজ হোসেন ও তার ভাতিজা শহিদুল ইসলাম বলেন, নুর মোহাম্মদ দিনমজুরির কাজ করে কোন রকম সংসার চালাতেন। সংসারে অভাব থাকায় ২ ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মনোবজান বেগম প্রায় ১৫ বছর আগে ঢাকার নারায়নগঞ্জে বিবাহ বসেন। অভাব ও সচেতনতার অভাবে ছেলে মেয়েদেরকে লেখা পড়া করাতে পারেননি তিনি। বড় ছেলে মিজান (২৭) মানসিক প্রতিবন্ধী। থাকেন বাবার কাছে।
ছোট ছেলে মিরাজ (২৪) বিবাহ করে জেলা সদর ঝালকাঠিতে থাকেন। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন। মেয়ে শেমালা বেগমকে ঝালকাঠির শহিদুলের কাছে বিবাহ দিয়েছেন। শহিদুল দিন মজুরের কাজ করেন। নুর মোহাম্মদ আরো জানান, তার তিন শতাংশ বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমাজমি নাই। অভাব থাকায় ওই জমিতে শক্ত পোক্ত কোন ঘর নির্মাণ করতে পারেননি। বাঁশ খুঁটির উপরে ভাঙা টিন দিয়ে চাপা দেয়া একটি ঝুপড়ি ছোট ঘর ছিলো। সেই ঘরেই অর্ধাহার অনাহারে নুর মোহাম্মদ তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
হঠাৎ ১৫ জুন মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টি ও বাতাসে তার ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অতি কষ্টেই বসবাস করছেন তারা। তিনি আরো জানান, ছেলে মিরাজ মাঝে মধ্যে সামান্য টাকা পয়সা দেন। স্থানীয় মেম্বর বয়স্ক ভাতার কার্ডকরে দিয়েছেন। স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যান সরকারী চাল ডাল মাঝে মধ্যে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ছোট ছেলে মিরাজ হোসেন ও তার ভাতিজা শহিদুল ইসলাম আরো জানান, এর আগে দুইবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। তবে ঘর ভেঙে যাওয়ার পর আবার নতুন করে আবেদন করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হোসেন জানান, নুর মোহাম্মদের এ বিষয়টি জানতে পেরে তার বাড়িতে গিয়ে কিছু খাবার, দুইবান টিন ও ৬ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অফিসে আসতে বলেছি। তাদেরকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
এমবি
